কভিড-১৯ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের আগেই বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে বড় সফলতা পেয়েছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে তা ২০.৫ শতাংশে নেমে আসে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি। জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, অর্থাৎ তাদের দৈনিক আয় ৩.২০ ডলারের নিচে।
সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রণয়ন করা অংশীদারি প্রতিবেদন ২০২২-এ বাংলাদেশ নিয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সামাজিক নিরাপত্তা খাত বিশেষজ্ঞ হিরোকো উচিমুরাশিরোইশি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের জন্য মহামারির মতো ঘটনা বড় ধাক্কা; এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, কার্যকর সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কতটা।’ কভিড-১৯-এর প্রকোপের কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক নানা ব্যবস্থা নিতে হয়, যার কারণে একই সঙ্গে সরবরাহ ও চাহিদা ব্যবস্থা বড় ধরনের ধাক্কা খায়; বিপুল পরিমাণ মানুষের চাকরি যায়, ফলে দরিদ্র মানুষের আয় কমে যায়। খাদ্যস্বল্পতা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ জটিলতার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে।
এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যুক্ত হলে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছিল, সেখান থেকে সহজেই ছিটকে পড়তে পারে। বাংলাদেশে প্রায়ই ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হয়, যার কারণে দরিদ্র ও অরক্ষিত মানুষ বিশেষভাবে আক্রান্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারির প্রভাব মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দরকার। সে কারণে সরকার সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কভিড-১৯ মহামারিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায়।
এর মধ্য দিয়ে দরিদ্র মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পুনরুদ্ধার জোরদার করাও তার লক্ষ্য।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার বিকাশে মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করে। সরকার তখন মানুষের জীবনচক্রভিত্তিক অধিকতর সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করে। এই কৌশলের অধীনে সরকার যে অর্থ ব্যয় করছে, তা থেকে আরো ভালো ফল পেতে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা করছে। সরকারকে সহযোগিতা করতে জাইকার সঙ্গে তখন এডিবি, জাপান ফান্ড ফর প্রসপেরাস অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক যোগ দেয়, অর্থাৎ সামাজিক সক্ষমতা কর্মসূচিতে সহায়তা করতে তাদের এই উদ্যোগ।
এই উদ্যোগ মূলত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির তিনটি খাতে নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়—কর্মসূচির আওতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং জীবনচক্রের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত চাহিদার বিষয়টি আরো ভালোভাবে আমলে নেওয়া।
আরো বেশিসংখ্যক জ্যেষ্ঠ নাগরিক, বিধবা ও প্রান্তিক নারীকে প্রাসঙ্গিক ভাতা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়, সে জন্য এই কর্মসূচির আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্ন ও দ্রুততর করতে এমআইএস তৈরি ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হয়। এ লক্ষ্যে সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
এডিবির সামাজিক নিরাপত্তা খাত বিশেষজ্ঞ হিরোকো উচিমুরাশিরোইশি বলেন, জরুরি অবস্থা, বিপর্যয় এসব থেকে মানুষ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে যদি তাদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য, সামাজিক ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা মেটানোর ব্যবস্থা থাকে।