প্রধানমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলতে ভয়ানক খেলায় অনুপ্রবেশকারীরা

প্রধানমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলতে ভয়ানক খেলায় অনুপ্রবেশকারীরা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, দেশে-বিদেশে এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সরকার। বিশেষত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভেতরে বিভিন্ন বক্তব্যে ধারাবাহিকভাবেই বলছেন- আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হবে, সরকার সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ সফরেও বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী নিঃসংকোচে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন।

 

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনাররা দেখা করতে গেলে তিনি তাদেরও একই কথা জানিয়েছেন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর সুষ্ঠু নির্বাচনের সেই প্রতিশ্রুতিকে ভণ্ডুল করে দিতে ভয়ানক খেলায় মেতেছে খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী একটি চক্র।

বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতি যখন পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রধান আলোচনার বিষয়, ঠিক তখন খোদ প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তৎপর কতিপয় অনুপ্রবেশকারী। ‘শেখ হাসিনা নৌকা দিছে, আবার ইলেকশন কিসের?’- আওয়ামী লীগ নামধারী কেউ কেউ প্রকাশ্য সভায় এমন হুংকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতিকে দেশ-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতি, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের চিঠি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকজন সদস্যের চিঠিসহ সামপ্রতিক কিছু ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে নিয়মিত বলছেন- আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) একই কথা বলছে। এমনকি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির দায়িত্বশীল নেতারাও তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। ঠিক সেই সময়ে দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হুমকি-ধামকি দিয়ে বিশ্বদরবারে ভিন্ন বার্তা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী, সরকার, ইসি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ কেউ প্রকাশ্য সভায় এমন বার্তা দিচ্ছেন যে- আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দিয়ে ‘নৌকা’ প্রতীক দেওয়া মানেই নির্বাচন শেষ। এরপর আর নির্বাচনের দরকার কেন, কিংবা কিসের নির্বাচন- এমন হুমকি দিয়ে কার্যত আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে কেউ অন্তরায় সৃষ্টি করলে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল কিংবা প্রার্থীদের ভয়-ভীতি দেখানো হলে এরসঙ্গে জড়িতরা ভিসানীতির আওতায় পড়বেন। অথচ, সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ চলমান স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে প্রকাশ্যে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। ‘মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন না, দয়া করে বাড়ি চলে যান’- সরাসরি এমন হুমকি দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল না করতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। জীবন নাসের ভয়ে ভীত হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি, এমনকি আতঙ্কে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই প্রার্থী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে- নির্বাচনের মাঠে, বিশেষত: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রকাশ্য সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে এমন হুমকি দেওয়ার ঘটনাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা এমন ষড়যন্ত্রকারীরা দলকে বড় বিপদে ফেলে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।

রাজনীতি