ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কদিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনে বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গতকাল শুক্রবার বাসে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস টার্মিনালগুলোতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন যাত্রীরা। তবে ঈদুল ফিতরের ন্যায় ট্রেন ও লঞ্চযাত্রীরা স্বস্তিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত ভিড় না থাকলেও কানায় কানায় পূর্ণ ছিল লঞ্চ ও ট্রেন। ঈদে বাসযাত্রায় বকশিশ না নেয়া ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস নিয়ে বাসমালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়েছে বৃহস্পতিবার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ হয়েছে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। তাই গতকাল শুক্রবার ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। সরকারি ছুটি ২৭ জুন (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবারই অনেক চাকরিজীবী অগ্রিম ছুটি নিয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আজহায় ট্রেনের সময় ঠিক রাখা এবং শিডিউল বিপর্যয় দূর করতে ঢাকাগামী ৮ এক্সপ্রেস ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

এবারের যাত্রায় বৃষ্টি, সড়কের পাশে ফলের বাজার, পশুবাহী গাড়ি এবং সড়কের পাশে অস্থায়ী পশুর হাট যানবাহন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। রাজধানীর কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও গাবতলীতে বাস টার্মিনালে দেখা যায়, টিকিটসহ যাত্রীরা দীর্ঘ সময় বসে রয়েছেন। অধিকাংশই অগ্রিম টিকিট কেটেছেন। সঠিক সময়ে বাস না আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। যদিও দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গগামী যাত্রীদের এ সমস্যায় পড়তে হয়নি। বাসমালিকরা জানিয়েছেন, যাত্রীর ভিড়ের কারণে অতিরিক্ত বাস নামিয়েও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের জিএম রাইসুল ইসলাম বলেন, গত ২১ তারিখ থেকে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর চাপ রয়েছে। গতকাল আজ থেকে এই চাপ আরও বেড়েছে। যে গাড়ি ভোর ৪টার সময় আসার কথা ছিল, সেটা গতকাল সকাল ৯টায় এসে পৌঁছায়। যমুনা সেতুতে জ্যাম তৈরি হয়েছে, এতে আগামীতে শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে— এমন একটা ধারণা করা হচ্ছে। গত ঈদে রাস্তা ক্লিয়ার ছিল; কিন্তু এবার জ্যামের ভাব চলে আসছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, বিআরটিএর নির্ধারিত দামে টিকিট বিক্রি হয়েছে, এবারও আগেই অনলাইনে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যে দু’চারজন যাত্রী আসছেন, তাও পেছনের এক-দুটি সিট পাচ্ছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, ট্রেনগুলো প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে ছেড়ে এসে কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশের আগে বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে না। ট্রেনগুলো সরাসরি জয়দেবপুর বা টঙ্গী স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশনে চলে যাবে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি, রংপুর এবং চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না। ঈদের ১০ দিন আগে ও ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন কার সংযোজন করা হবে না।

আরও জানানো হয়, টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ঈদের আগে পাঁচদিন জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনে এবং বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী ও ঢাকা স্টেশন থেকে বিমানবন্দরগামী আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো টিকিট ইস্যু করা হবে না। গাবতলী কাউন্টারে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা আগে এসেছেন সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী জোবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ঈদের ছুটি ২৭ জুন থেকে শুরু হলেও আমি অফিস থেকে ২৪, ২৫ ও ২৬ জুন ছুটি নিয়েছি, তাই আজ (শুক্রবার) সাপ্তাহিক বন্ধ হওয়ায় ঈদ করতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। অনেকটা সময় বাকি থাকলেও আগেই কাউন্টারে এসে অপেক্ষা করছি। বাড়িতে পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দটাই অন্যরকম। তাই এক-আধটু কষ্ট কোনো বিষয় নয়।

বাস কাউন্টারগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনলাইনে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়াতেই টিকিট করেছি। এখানে বেশি ভাড়া দেয়ার সুযোগ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতি বছরই ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের চাপ বাড়তে থাকে। শেষদিকে এটা কয়েকগুণ বাড়ে বলে জানিয়েছেন সায়েদাবাদ হিমালয় কাউন্টারের মাস্টার জুলহাস। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের (২২ জুন) চেয়ে শুক্রবার যাত্রীদের চাপ বেশি। সম্পূর্ণ সিট পূরণ করে গাড়ি ছাড়ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোগান্তি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে অনলাইনে টিকিট না করেও সায়েদাবাদ কাউন্টার এসে টিকিট সংগ্রহ করে অনেককেই নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
ঈদে বকশিশ ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বাসমালিকদের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় ‘ঈদ বকশিশের’ নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা এবং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়া যাবে না। ঢাকার লক্কড়-ঝক্কড় বাস শহরের বাইরে রিজার্ভে পাঠানো যাবে না। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া এবং ড্রাইভারের অনুপস্থিতিতে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, লঞ্চগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রা করছে।

 

জাতীয়