দেশের ১৫৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে পূর্ণ উৎপাদনে আছে মাত্র ৫০ টি। বাকিগুলোর বেশিরভাগই জ্বালানি স্বল্পতায় আংশিক চলছে কিংবা বন্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষতার অভাবে জ্বালানির টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না।
তাদের মতে, বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দরকার বিশেষজ্ঞ প্যানেল। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, পায়রার কয়লা সংকটসহ সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ থেকে শিক্ষা নিয়েছে তারা।
কম খরচে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের জোগানদাতা পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট কয়লার সংকটে বন্ধ হয় ২৫ মে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয় ৫ জুন। তাদের বকেয়া এখনো ২০ কোটি ডলারের বেশি। এরআগে, একই কারনে তিন সপ্তাহের বেশি সময় বন্ধ ছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।
পিডিবির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে সরবরাকারীদের পাওনা ২৫ কোটি ডলার। বকেয়ার চাপে আছে পেট্রোবাংলাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজি, কয়লাসহ জ্বালানির দাম কমলেও ডলার সংকটের কারণে এর সুফল নিতে পারছে না বাংলাদেশ।
জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রস্তুত না করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের পেছনে অদক্ষতাকে দুষছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নাই কেন্দ্র তৈরি করো। কোথা থেকে প্রাথমিক জ্বালানি আসবে, কি হবে এগুলো পরে দেখা যাবে। আপাতত বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে থাকো।
‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ওঠা নামা, দাম প্রেডিক্ট করা, সপ্লাই সোর্স দেখা, কোথায় কোন দুর্ঘটনা ঘটছে, কোথায় আমার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তার প্রভাব কিভাবে মার্কেটে পড়বে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক জ্বালানির মার্কেটটাকে দেখা বোঝা এবং সে অনুযায়ী পোর্ট ফোলিও ম্যানেজ করার জন্য একটা দক্ষ টিমের দরকার।’
বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার মেগাওয়াট। তারপরও তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলে দেখা দেয় চরম লোডশেডিং। তবে স্বস্তির খবর, পায়রার জন্য কয়লাবাহী জাহাজ এরই মধ্যে চলে এসেছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘পায়রা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটা ভালো হয়েছে যে এ ব্যাপারে আমরা এখন সবাই সচেতন। আশা করি এরপরে এ ধরনের ডিজরাপশনটা হবে না। পিডিবির বাল্ক সাপ্লাই ট্যারিফ এবং উৎপাদন ব্যয় ছিলো একটা বড় গ্যাপ। এখন এটা অনেকটাই কমে এসেছে। একারনে আমার মনে হয় যে, যে সমস্যা আশঙ্কা করা হচ্ছে এটা ভবিষ্যতে হওয়ার সুযোগ নেই।’
বর্তমানে আমদানি ও উৎপাদন মিলে বিদ্যুৎ মিলছে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। যার অর্ধেক গ্যাস থেকে, কয়লা থেকে ১৬ থেকে ১৯শ এবং তরল জ্বালানি থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট।