এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা অনলাইনে টিকিট, কম যানজট, হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা অনলাইনে টিকিট, কম যানজট, হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি মাত্র তিন দিন। গত শুক্রবার থেকেই ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ট্রেন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে। তবে অনেকটা নির্বিঘ্নেই এবার বাড়ি ফিরতে পারছে মানুষ। কোথাও নেই হুড়োহুড়ি। গতকাল ট্রেনের টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনেও দেখা যায়নি দীর্ঘ লাইন। স্টেশনে মাদুর বিছিয়ে আগের দিন থেকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি কাউকে। বাস কাউন্টারগুলোতেও দেখা যায়নি উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীরা জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রি বাড়ানোয় কমে গেছে ভোগান্তি। নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেটে টার্মিনালে গিয়েই বাস বা ট্রেনে উঠে পড়া যাচ্ছে। গতকাল সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, টিকিট ছাড়া প্ল্যাটফরমে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই প্ল্যাটফরমে নেই অতিরিক্ত চাপ। স্টেশনের ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে বাঁশ দিয়ে ছয়টি গেট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ট্রেনের টিকিট ও এনআইডি কার্ড চেক করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আগে নন-এসি মোট আসন সংখ্যার ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট হিসেবে ছাড়া হচ্ছে। এসব টিকিট নিতে যাত্রীরা কাউন্টারে লাইন ধরলেও খুব বেশি ভিড় ছিল না। গত ১৫ জুন যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তারাই গতকাল বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। গতকাল রাত থেকে ট্রেনে ভিড় বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, প্ল্যাটফরমে যাত্রীর চাপ কমাতে এবার কমিউটার ট্রেনের কাউন্টার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি হওয়ায় স্টেশনে চাপ কমে গেছে। মানুষ নির্বিঘ্নেই বাড়ি ফিরতে পারছে।

যাত্রীদের মধ্যেও স্বস্তি দেখা গেছে। চট্টগ্রামের যাত্রী দিদারুল আলম বলেন, আগে একদিন আগে প্ল্যাটফরমে এসে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। তারপরও পাওয়া যেত না। টাকা বাড়িয়ে দিলে পেছনের দরজা দিয়ে টিকিট দিত। অনলাইনে টিকিট বিক্রির কথা বললেও টিকিট পাওয়া যেত না। এবার শতভাগ অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় ঘরে বসেই টিকিট কাটতে পেরেছি। ঝামেলাও হয়নি, বাড়তি টাকাও গুনতে হয়নি। প্ল্যাটফরমে টিকিট ছাড়া যাত্রী ঢুকতে না দেওয়ায় হুড়োহুড়ি নেই। সারা বছর এমন থাকলে কতই না ভালো হতো! রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৩২ জোড়া ট্রেন যাত্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছে কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গতকাল পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ তিনটি রুটে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২ জোড়া ট্রেনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার যাত্রী গতকাল ঢাকা ছাড়েন বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আগের মতো ভিড় দেখা যায়নি রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও। গতকাল দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়, সকালে কিছুটা ভিড় থাকলেও দুপুরে কমে গেছে। এ ছাড়া অধিকাংশ কোম্পানি অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু করায় টার্মিনালে ভিড় কম। ঢাকার ভিতরে বিভিন্ন এলাকায় অনেক কাউন্টার গড়ে ওঠার কারণেও অনেক যাত্রী গাবতলী পর্যন্ত আসেন না। এ ছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ার পর গাবতলীতে যাত্রী কমেছে বলেও জানান তারা। তবে মঙ্গলবার থেকে যাত্রী বাড়বে বলে আশা করছেন এই টার্মিনালের পরিবহনকর্মীরা।
গতকাল বিকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে অবশ্য দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ যাত্রীর হাতেই ছিল আগে কিনে রাখা টিকিট। কেউ অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছিলেন, কেউ ৮-১০ দিন আগেই কাউন্টারে এসে টিকিট নিয়ে গেছেন। তবে অনলাইনে টিকিট না ছাড়া ছোট কিছু পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে। এসব পরিবহনে বাড়তি ভাড়াও রাখতে দেখা গেছে।

জাতীয়