গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মঙ্গলবার সকালে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা স্বাভাবিক থাকলও দুপুর থেকেই গাড়িও মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখো যাত্রীরা।
ভোগড়া বাইপাস সড়কে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে দায়িত্ব পালনরত গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ নেই বললেই চলে। এসময়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পরিবেশ ছিল অনেকটাই বছরের অন্যান্য দিনের মতোই। তবে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড়, চন্দনা- চৌরাস্তা মোড় এবং স্টেশন রোড এলাকায় গাড়ি ও মানুষের চাপ ছিল । মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্থানে স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠাতে গিয়ে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো: আলমগীর হোসেন জানান, যানজট থেকে রেহাই পেতে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা ট্রেডিশন আছে যে দূরপাল্লার যাত্রায় মধ্যরাতে রাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত যানবাহনে যাতায়াত করে। তাই সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ বেড়ে যায়।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ ছিল। তবে মঙ্গলবার সকালে তা কিছুটা কমলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোর এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব খান জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষের এবং গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যেই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে মহাসড়কে অবস্থানরত গাড়ির অপেক্ষায় থাকা মানুষ রাস্তা করতে গিয়েও মাঝে মাঝে গাড়ির ধীরগতি ও লম্বা লাইন হচ্ছে।
রাজধান ীর আবদুল্লাপুর এলাকার ‘আলামিন পাইলিং’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কন্ডাক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে নিজস্ব মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২৫ মিনিটে তিনি গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পৌঁছান। ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত গাড়ি ও যাত্রীর তেমন চাপ নেই। তবে টঙ্গীর পর থেকে এ পর্যন্ত স্থানে স্থানে যাত্রী তুলতে গিয়ে যানবাহনের জটলা তৈরি হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরী এলাকায় ঢাকা ময়মনসিংহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কগুলোতে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। গুগল ম্যাপ, সিসিটিভি ফুটেজ, এবং ড্রোন ব্যবহার করেও মহাসড়কগুলোতে যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে যানবহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপ কিছুটা বাড়লেও বড় রকমের প্রাকৃতিক কোন দূযোগ না ঘটলে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা আছে তাতে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যানজট নিরসনে গাজীপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে মহাসড়কগুলোতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরো বলেন, গুগল ম্যাপে লাল চিহ্ন দেখা গেলেই আমাদের ফোর্স সেখানে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। এছাড়া ড্রোন দিয়ে রাস্তায় কোন গাড়ি কি অবস্থায় আছে কিংবা কোথাও গাড়ি বিকল হলো কিনা বা কি কারণে যানজট হচ্ছে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কোথাও কোথাও বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে কমিশনার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা জড়িত পরিবহন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে যাত্রী সাধারণ ভোগান্তির শিকার না হন। তারা যাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে তার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
গাজীপুরে রোভার স্কাউটের ট্রেজারার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন জানান, যানজট নিরসনে অর্ধ শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য ভোগড়া বাইপাস মোড়, টঙ্গী স্টেশন রোড, চান্দনা চৌরাস্তা, চন্দ্রা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পয়েন্টে গাজীপুরের পুলিশের সাথে মহাসড়কে যানজট নিরেসনসহ যাত্রীদের বিভিন্ন সেবায় কাজ করছেন।