নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন শনিবারও (১ জুলাই) রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। কমলাপুর রেল স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। সে তুলনায় ঢাকায় ফেরা যাত্রী চাপ কম। ট্রেনের শিডিউলেও কোনো হেরফের হচ্ছে না।
কমলাপুর রেল স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন বলেন, যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঈদ যাত্রা করতে পারছেন। প্রতিটি ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যে যাচ্ছে এবং ফিরছে। যাত্রীদের সেবা দিতে নিরলস ভাবে কাজ করছে রেলের কর্মীরা। তবে এখন পর্যন্ত ঢাকামুখী যাত্রীর তুলনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি। আগামীকাল রোববার (২ জুলাই) ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, তিতাস কমিউটার, একতা এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস যাত্রী নেওয়ার জন্য পৃথক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। প্ল্যাটফর্মার ভেতর সিরিয়াল ধরে ঢুকছেন যাত্রীরা। এর আগে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে প্রত্যেকের টিকিট চেক করছেন রেলের কর্মীরা।
জামালপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। এ ট্রেনে যাওয়ার জন্য দেড় ঘণ্টা আগে প্ল্যাটফর্মে হাজির হন আমিনুল ইসলাম। আলাপকালে তিনি বলেন, তিনি ধানমন্ডির একটি বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করেন। ঈদের আগে তার এক সহকর্মী ছুটিতে গেছে। আজ সকালে সে কাজে যোগ দিয়েছে। তাই আজ থেকে চার দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন আমিনুল।
বেলা সাড়ে ১১টায় তারাকান্দির উদ্দেশ্যে ছাড়ে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস। তবে সকাল ১০টা থেকেই ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে। এ ট্রেনে গ্রামে যাবেন কেরানীগঞ্জের আনোয়ার হোসেন দম্পতি। আনোয়ার বলেন, সাধারণত ঈদ মৌসুমে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন সময় মত পাওয়া যায় না। এবার দেখি দের ঘণ্টা আগেই ট্রেন হাজির। এটা দেখে অনেকটা অবাকই হয়েছি।
কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন আরও বলেন, সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ১২টা ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্য ছেড়ে গেছে। আরও অনেকগুলো ট্রেন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় আছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে যাত্রী চাপ।
অন্যদিকে, ঢাকামুখী যাত্রী চাপ কম। শনিবার (১ জুলাই) সকাল ৭টায় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরেন ফিরবো আলী। তিনি বলেন, গতকাল রাতে যথা সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে। স্টেশনে যাত্রী চাপ থাকলেও যাত্রা ছিল আরামদায়ক। ট্রেনে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। আজ সকালে ঠিকঠাক মতোই কমলাপুর নামলাম। তিনি বলেন, আগে ঈদ যাত্রা বা ঢাকা ফেরার সময় ঠেলাঠেলি করে ট্রেনে উঠতে হতো। গায়ের ওপর অন্য যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকতো। অনেক ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রী অন্য যাত্রীদের আসনের হাতলে বসে যাতায়াত করতো। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে তর্কও হতো। এই সমস্যা এখন নেই বললেই চলে।
সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেসে সপরিবারে কমলাপুর ফেরেন স্বামীবাগের বাসিন্দা রোকন উদ্দিন। তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের সদর উপজেলায়। প্রতি পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে যান। সবাই খুব আনন্দ করেন।
তিনি বলেন, সাধারণত রংপুরের ট্রেনগুলোতে যাত্রা বিলম্ব একটা কমন ব্যাপার। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রী চাপ বেশি হলে ভোগান্তিও পোহাতে হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা ক্রমে সমাধান হচ্ছে। এখন অনলাইনে টিকিট কাটার ভোগান্তিটা কমাতে পারলে যাত্রীরা স্বস্তি পাবেন।
সকাল ৯টার ট্রেনে ময়মনসিংহ থেকেসকাল ৯টার ট্রেনে ময়মনসিংহ থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছান নয়াপল্টনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনা করায় ট্রেন যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে। তবে অনলাইনে টিকিট পাওয়া খুবই কষ্টের। ঈদের আগে টিকিট যেন সোনার হরিণ। ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করা দরকার।