রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জুনে ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠী বিদ্রোহের পর প্রথমবারের মতো একটি বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিলেন। তিনি গতকাল সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে কার্যত চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার চারটি দেশের নেতাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।
ভারত এ বছর শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেছে, যা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর ঠিক দুই সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে এসসিও পুতিনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করেছে যাতে দেখা যায় যে, ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও তিনি এখনও বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্মে স্বাগত এবং গ্রহনযোগ্য হচ্ছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মোদী। মূলত চারটি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল এই সম্মেলনে। তার মধ্যে রয়েছে ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’, কট্টরপন্থার মোকাবিলা এবং ডিজিটাল রূপান্তর। এ ছাড়া, অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি নিয়েও আলোচনা করা হয়ে থাকতে পারে। যদিও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়ে চীনের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে সমস্ত দেশ, বিশেষ করে ভারত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
প্রথমে সব দেশের শীর্ষ নেতাদের সশরীরে এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্মেলনের সময়ও কাটছাঁট করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা থেকে শুরু হয়েছে এ সম্মেলন। শেষ হয় দুপুর সাড়ে চারটা নাগাদ। ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা শীর্ষ সম্মেলন ভার্চুয়াল করার জন্য ভারতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। যদিও রাশিয়া সশরীরে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠকে বলেছেন, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক মঞ্চে আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থাপনার সূক্ষ্ম সুর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন; আমাদের অবশ্যই ভাগ করা মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে হবে, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং বিশ্বব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে, আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতি প্রতিরোধ করতে হবে,’ তিনি এসসিও হেডস অফ স্টেট কাউন্সিলের অধিবেশন বলেছেন। চীনা নেতা এসসিওর দেশগুলোকে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সহজতর করতে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি, বৈশ্বিক উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যবস্থা রক্ষায় যৌথ অবদান রাখার আহ্বান জানান।
রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, কাজখস্তান, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান— এই ৮ দেশ এখন শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য। এ ছাড়াও ৪টি দেশ- আফগানিস্তান, বেলারুশ, ইরান এবং মঙ্গোলিয়া রয়েছে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসাবে। ডায়লগ পার্টনার হিসেবে রয়েছে ৯টি দেশ- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, মিশর, কাতার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, কম্বোডিয়া এবং সউদী আরব। ঐতিহ্য অনুসরণ করে অতিথি দেশ তুর্কমেনিস্তানও ডাক পেয়েছে। ইরানকে এ বছর এসসিও-র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অপর দিকে, রাশিয়ার প্রধান মিত্র বেলারুশকে এসসিও-র অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে এবং আগামী বছরের মধ্যে তা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত আগে এই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য ছিল না। ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্য হয়। সূত্র : বিবিসি, তাস।