ঢাকায় বড় সমাবেশ করে সরকার পতনের অভিন্ন একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। দিনক্ষণ এখনো ঠিক না হলেও ১৫ জুলাইয়ের আগেই এ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। একই দিনে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। তবে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত না হলেও বিএনপির টার্গেট এবার রাজধানী ঢাকা। অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয়। তাই এতদিন ধরে তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার ঢাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ এবার কর্মসূচি হবে ঢাকামুখী অথবা কর্মসূচির মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ঢাকা। ফলে ঢাকাকে ঘিরেই সিরিজ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার এই আন্দোলন চলবে।
বিএনপির প্রাথমিক পরিকল্পনা হচ্ছে—দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে যে ধরনের কর্মসূচি চলছিল, একদফা আন্দোলনের প্রথম ধাপে আবারও সে ধরনের কর্মসূচিই পালন করা হবে। বাধ্য না হলে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক। তবে তা আরও জোরালোভাবে, আরও শোডাউনের মাধ্যমে পালিত হবে। কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করাই হবে বিএনপির লক্ষ্য। আর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকামুখী রোডমার্চ, চলো চলো ঢাকা চলো, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির সঙ্গে ঢাকায় ‘টানা অবস্থানে’র ঘোষণা আসতে পারে।
সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করা হবে। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে একই দিনে এই দুটি ঘোষণা দিতে পারে। একদফার আন্দোলন সামনে রেখে গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মধ্য জুলাইয়ে একদফার ঘোষণা এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পুনরায় যুগপৎ আন্দোলন শুরুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুগপতের শরিকদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে শিগগিরই কর্মসূচিসহ সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হওয়ার কথা।
সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে কী ধরনের কর্মসূচি থাকবে—জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান কালবেলাকে বলেন, ১০ দফার ভিত্তিতে আমরা এতদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি। আগামীতে একদফার কর্মসূচিও হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। কয়েক মাস ধরে আমরা যে ধরনের কর্মসূচি করে এসেছি, আবারও সেটাই করব।
গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদুল ফিতরের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ১৪ জুন চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এ সমাবেশ শুরু হয়েছে, ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। এ ছাড়া বিএনপির অন্য চার অঙ্গসহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের যৌথ উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ছয় বড় জেলায় এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বিএনপির পাশাপাশি যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপতের ধারায় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে তারা। গত ৪ থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে ছয়দলীয় এই জোটের।
জানা গেছে, পুনরায় যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলেও বিএনপি ও শরিকদের দলীয় কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। আর বিএনপির দলীয় কর্মসূচিও ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পালন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় বিএনপি মনে করছে—সরকারের পতন ঘটাতে হলে রাজধানী ঢাকায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই আগামীতে ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন প্রস্তুত। সরকারি নানা বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করে মহানগর বিএনপি ইতোমধ্যে তার প্রমাণও দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন হলেও তখন রাজধানীতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। তাই একদফার আন্দোলনে এবার ঢাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিএনপির সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয়। একজন সদস্য বিএনপি ও জামায়াতের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে সেটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। জামায়াত নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যে এই টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট’—গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব এমন মন্তব্য করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন শনিবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিবের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিএনপি মহাসচিব।
গত ৩০ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর জামায়াত যুগপৎভাবে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে। তবে