ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণ

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো একজন রোগী মারা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮২ জন। গত এক সপ্তাহে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৪২৮ জন। আগের সপ্তাহে ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ছিল ৪৫৫ জন।

অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত তথ্য বিশ্লেষণ করে আরো দেখা গেছে, এই সময়ে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী মাস আগস্টে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হতে পারে। তাই কারিগরি কমিটি গঠন করে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে একদিকে যেমন হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে, অন্যদিকে মৃত্যু আরো বেড়ে যেতে পারে।

বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোগী যে হারে বাড়ছে, এতে হাসপাতালের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় হলো কারিগরি কমিটি গঠন করা, করোনার সময়ে যেমনটি করা হয়েছিল। মশকনিধনে সবার সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, চিকিৎসার জন্য তিন স্তরের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

প্রথমত, গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা। সেখানে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে। জ্বর হলেই যাতে মানুষ পরীক্ষা করতে আসে। দ্বিতীয়ত, আক্রান্ত হলেও যারা গুরুতর রোগী নয়, তারা যাতে মশারি টানিয়ে বাড়িতে থেকেও সেবা নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা।

তৃতীয়ত, শিশু, সন্তানসম্ভাবনা নারী ও বৃদ্ধ বা যাদের পুরনো রোগ আছে, তাদের অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
আরো একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৮২

দেশে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো একজন মারা গেছে। একই সময়ে আরো ১৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট ৬৫ জন মারা গেল। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ২৯৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৬৩৭ জন ঢাকা বিভাগের বাইরের।

রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ, মৃত্যু আড়াই গুণের বেশি

দেশে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ৩২০ জন। একই সময় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। আগের সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬৩৯ এবং মৃত্যু হয় সাতজনের। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। মৃত্যু বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।

দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে ঝুঁকি বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বছর যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তাদের মৃত্যু পর্যালোচনার কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মৃতদের লক্ষণ-উপসর্গ দেখে তাঁরা মনে করছেন, বেশির ভাগই দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, যদি কেউ প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, তার গায়ে ব্যথা হবে, সামান্য উপসর্গ হবে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে অন্যান্য অনেক সমস্যা দেখা দেবে। ডেঙ্গুর আশার জায়গা হচ্ছে, কেউ প্রথমবার আক্রান্ত হলে অবস্থা এত গুরুতর হয় না।

প্রকোপ বেশি ডেন-টু ও থ্রির

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর জীবাণুর চারটি ধরন ডেন-ওয়ান, ডেন-টু, ডেন-থ্রি ও ডেন-ফোরে রোগীরা আক্রান্ত হয়। অন্তত ২০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সরকারের আইইডিসিআর দেখেছে, আক্রান্তদের ৬২ শতাংশ ডেন-টু এবং ৩৮ শতাংশ ডেন-থ্রিতে আক্রান্ত হয়েছে।

অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশে কত মানুষের ডেঙ্গু হয়েছে, এর সঠিক তথ্য নেই। কারণ অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু রোগ নির্ণয় করা হয়নি। অনেকে চিকিৎসকের কাছেই যায়নি। ফলে প্রকৃত সংখ্যাটা অনেক বেশি। এ কারণে এবার যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে, তাদের অনেকেই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবে।

স্বাস্থ্য