আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতির ঝুঁকিতে নাগরিকরা অবহেলায় তথ্য ফাঁস

আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতির ঝুঁকিতে নাগরিকরা অবহেলায় তথ্য ফাঁস

বাংলাদেশের কয়েক লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন) ওয়েবসাইট থেকে। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। তবে এটি হ্যাকিং নয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অর্থাৎ ন্যূনতম নিরাপত্তা ছিল না ওয়েবসাইটের। মূলত ওয়েবসাইটটির নিজস্ব দুর্বলতার কারণে যে কেউ ব্যক্তিগত তথ্য দেখার সুযোগ পেয়ে যান। এতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তবে এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে গত দুইদিনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ দেখে অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে একজন নাগরিক যেকোনো সময় আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ ৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে একটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। কোন্ ওয়েবসাইট- তা নিরাপত্তার জন্য তারা প্রকাশ করেনি। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রকল্প বিজিডি ই-গভ সার্ট বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর নজরে আসার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু করে সার্ট টিম।

পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর রবিবার সকালে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটরিয়ামে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, এটা বিশেষভাবে কেউ চুরি করেছে বা সাইবার হ্যাকাররা হ্যাক করেছে- এ রকম কিছু আমরা তদন্তে পাইনি। আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হলো সরকারের ওই ওয়েবসাইটটিতে কিছু টেকনিক্যাল দুর্বলতা ছিল। ফলে তথ্যটা খুব সহজেই দেখা যাচ্ছিল, পড়া যাচ্ছিল। বলতে গেলে উন্মুক্তই ছিল, যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেই মন্ত্রণালয় বা সংস্থার নাম বলে বিব্রত করতে চাই না। নিরাপত্তা বিষয়ে সব তথ্য পাবলিকলি বলা উচিত না। ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর মধ্যে একটিতে আমরা এ ধরনের দুর্বলতা পেয়েছি। এটা হ্যাকিং না। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই খবর প্রকাশ করায় আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তথ্য ফাঁসের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সেই মন্ত্রণালয় বা সেই সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।

সরকারি একটি ওয়েবসাইটে এত দুর্বলতার দায় কার জানতে চাইলে পলক বলেন, আমরা ২৯টি ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ঘোষণা করেছিলাম, ধাপে ধাপে এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন হ্যাক হয় তখন বিশাল অঙ্কের টাকা চুরি হয়ে যায়। তারপর আমরা অনুভব করি, সাইবার সিকিউরিটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এর আগে কিন্তু আমাদের রেসপন্স টিম বা গাইডলাইন ছিল না, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিল না। সেই ঘটনা ঘটার ফলে উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় সার্ট গঠন করি। তারপর আইন করি এবং প্রতি মাসে মিটিং করে ২৯টি ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ঘোষণা করি। পলক বলেন, আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমাদের ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ২৭ নম্বর তালিকায় যে প্রতিষ্ঠানকে আগে চিহ্নিত করেছিলাম সেই প্রতিষ্ঠান এই অবস্থার মধ্যে পড়ল। আমরা দেখেছি যে, ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পাবলিক হয়ে যায়। সেখানে ন্যূনতম যে সিকিউরিটি নেওয়ার কথা, সেটাও ছিল না। বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, টেকক্রাঞ্চের কোনো ই-মেইল তারা পাননি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড, সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডেটা সেন্টার (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়), সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। এসব তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে সাত বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে বলে আইনে উল্লেখ আছে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডই দেওয়া যাবে।

দুর্বলতায় তথ্য ফাঁস ॥ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘আমরা দেখেছি, কারিগরি ত্রুটি ছিল। যে কারণে তথ্যগুলো মানুষের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।’ বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জুনাইদ আহমেদ। তথ্য ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়েবসাইটটির নিজস্ব দুর্বলতার কারণে যে কেউ এই ব্যক্তিগত উপাত্ত দেখার সুযোগ পেয়ে যান। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, আগে সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়কেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। এখন বোঝা যাচ্ছে উপাত্ত হতে যাচ্ছে নতুন মুদ্রা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে, পাশাপাশি উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ মানুষকে সচেতন করা, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সক্ষমতা ও দক্ষ জনবল বাড়ানো, আইন ও নির্দেশিকার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৯টি ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’র প্রতিটির একটি করে নিরাপত্তা দল থাকা উচিত। পরে সাংবাদিকদের জুনাইদ আহমেদ বলেন, কেউ বলতে পারবে না তারা পুরোপুরি নিরাপদ, তবে প্রস্তুতি থাকতে হয়। এবারের ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রস্তুতি ছিল না। এই দায় তো কেউ এড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি থাকলে তারপর ঘটনা ঘটলে কিছু বলা যায়। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি না নেওয়ায় ক্ষতি হয়ে গেলে সেই দায়ভার এড়ানো যায় না।

ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ॥ এদিকে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব জানিয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগে হ্যাক করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য পাচার করা হয়েছে- এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সাইবার টিম সমন্বিতভাবে বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্তে তথ্য ফাঁসের ব্যাপারে আমলযোগ্য অগ্রগতির আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত তথ্য এক জায়গায় পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো যে কোথা থেকে, কীভাবে এলো তা এখন পর্যন্ত বোধগম্য নয়। সেটাই জানার চেষ্টা করছি।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুন একজনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। সেই তথ্যটি এনআইডি থেকে ফাঁস হয়েছে নাকি লোকাল কোনো সার্ভার থেকে হয়েছে- আমরা তা জানার চেষ্টা করছি। তথ্য কীভাবে ফাঁস হয়েছে, সার্ভার হ্যাক হয়েছিল কিনা, নাকি সার্ভারের দুর্বলতা ছিল, নাকি কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য দিয়েছে-আমরা সেসব জানতে কাজ করছি। কমান্ডার মঈন বলেন, তথ্যের অনেক প্যাটার্ন আছে। কোন্ ধরনের তথ্য ফাঁস হয়েছে, ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য নাকি প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য ফাঁস হয়েছে, ফাঁসকৃত তথ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের এ কাজে যদি কেউ সহায়তা করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করার মতো উপাদান এখনো হাতে পাইনি। আমাদের সাইবার ইউনিট এ বিষয়ে কাজ করছে। আমাদের আগে দেখতে হবে কী ফাঁস হয়েছে। সেগুলো বের করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।

ইসি থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি ॥ জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের সার্ভার কোনো হুমকির ভেতরে নেই দাবি করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ‘আমাদের এখান থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি। ’ তথ্য ফাঁস নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে রবিবার নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি। এদিকে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। রবিবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এনআইডি ডিজি এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, এই ‘ওয়েবসাইটের সঙ্গে এনআইডির কোনো সম্পর্ক নেই। এনআইডি একটা পৃথক সাইট। ১৭১ টি প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদাভাবে কানেক্টেড। কোটি কোটি ডেটা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পেলে সেই মোতাবেক কাজ করবেন উল্লেখ করে এনআইডি ডিজি বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা আমাদের সাইটে অ্যাবনর্মাল হিট পাইনি। আমাদের সার্ভার পাবলিক প্রপার্টি নয় এটা নিজস্ব সম্পদ। এখানে কেউ কিছু লিখতে পারে না।’ ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিলের প্রসঙ্গ টেনে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ওদের পোর্টাল অরক্ষিত থাকলে কিছু তথ্য লিক হতে পারে। এমন কিছু হয়েছে কি না ক্ষতিয়ে দেখছি। এখন পর্যন্ত আমাদের ডেটা সেন্টার ও ম্যানেজমেন্টে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যাদের সঙ্গে কাজ করছি তারাই থার্ড পার্টি। তাদের মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হয়নি। আমার কাছে অ্যাবনর্মাল হিট হয়নি। আমরা বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব। পার্টনার সাইড অডিট করব। আইসিটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে তদন্ত কমিটি করাব। এর পর ব্যবস্থা নেব।’

এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সার্ভার সুরক্ষিত রয়েছে। তারপরও সার্ভারের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আইসিটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। ইসির এনআইডি সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন বলেন, আমাদের এনআইডি ডাটাবেজ অনেকগুলো পার্টনারের সঙ্গে কানেক্টেড। তাই সিকিউরিটি লিক করার চান্স থাকে। কারণ তাদের সার্ভার থেকে তথ্যটা নিচ্ছে। আমাদের এনআইডি সার্ভারের থ্রেট নেই। বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেক নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় সরকার। ইসিতে ভোটারদের ছবি, আঙুলের ছাপসহ অন্তত ৪০টির তথ্য সম্বলিত তথ্যভান্ডার সংরক্ষিত রয়েছে। নানা ধরনের নাগরিক সেবা দিতে অর্ধশতাধিক সংস্থার সঙ্গে ইসির চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি তথ্যের ‘ভেরিফিকেশন সার্ভিস’ চালু রয়েছে।

আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন নাগরিকরা ॥ গত দুইদিনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের সংবাদ দেখে অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রত্যেকের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তথ্য ফাঁস হলে কী কী ঝুঁকিতে পড়তে পারেন তারা। এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলে একজন নাগরিক যেকোনো সময় আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, নাগরিকের ফাঁস হওয়া যেকোনো ধরনের তথ্যই অপব্যবহার হতে পারে। এসব তথ্য দিয়ে কোনো অপরাধী অন্য কারও নামে ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারে, সিম রেজিস্ট্রেশন করে সেগুলো দিয়ে অপরাধ করতে পারে। অপরাধীকে শনাক্ত করতে গেলে ওই নিরীহ সাধারণ নাগরিক ফেঁসে যেতে পারেন। এছাড়া আরএনএ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো ডাটা ফাঁস হলে এটা উদ্বেগের ব্যাপার। এভাবে নাগরিকদের ডিজিটাল আইডেন্টিটিগুলো ফাঁস হলে অবৈধ লেনদেনেরও আশঙ্কা থাকে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান বলেন, যে ধরনের ডাটা গিয়েছে বলে আমরা জেনেছি, এগুলো একজন মানুষের পার্সোনালি আইডেন্টিফিয়েবল ইনফরমেশন। যেমন- একজনের বাসার ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ফোন নম্বর ইত্যাদি দিয়ে সহজেই তাকে এবং তার অবস্থানকে নিশ্চিত করা যায়। যেহেতু আইডেন্টিফিয়েবল সব তথ্য আছে, সেক্ষেত্রে এসব ডাটা নিয়ে অপরাধীরা ওই ব্যক্তিকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করতে পারে। ফোন দিয়ে হুমকি দিতে পারে, চাঁদা চাইতে পারে। অনেকসময় এসব তথ্য ব্যাংকে দিয়ে কোনো ব্যক্তির ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাটাস (আর্থিক অবস্থা) জানতে পারে। তিনি বলেন, যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে এগুলো ব্যাংকের লেনদেনের জন্যও অনেক সময় লাগে। আমরা ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকে কোনো ধরনের সহযোগিতা নিয়ে গেলে কাস্টমার কেয়ার থেকে আমাদের কাছে মায়ের নাম, বাবার নাম, জন্ম তারিখের মতো তথ্য চেয়ে অথেনটিসিটি নিশ্চিত করা হয়। এসব তথ্য যদি অপরাধীদের হাতে যায়, সে ব্যাংকের তথ্য জেনে অবৈধভাবে লেনদেনের মাধ্যমে নাগরিককে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

জাতীয় তথ্য প্রুযুক্তি