কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট

কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করছে। কখনো ভোজ্য তেল, কখনো চিনি, কখনো বা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কয়েক হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এসব কথা বলেন।

এ সময় ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাব সভাপতি। গোলাম রহমান বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি নেই। তা সত্ত্বেও দেশে উৎপন্ন এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়ছে।

বেশির ভাগ পণ্যের মূল্য এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে আর ধারকর্জ করে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছে।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, সরকারের ধারণা, করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ সংকট, বর্ধিত চাহিদা, জাহাজভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পণ্যের মূল্য বেড়েছে। সামপ্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা অনেকে মনে করেন, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ায় মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ চেইন ব্যাহত হচ্ছে এবং পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গোলাম রহমান বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, কোনো ব্যাখ্যাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক নয়। তারা মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছে। তারা মনে করে, সারা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, বাংলাদেশ তা থেকে বিরত থেকেছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করাকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে ব্যাংক আমানতের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে। এই নীতি সময়ের সঙ্গে সংশোধন না করে অনুসরণ করে এসেছে। বারবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা সীমিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অকার্যকর। বড় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই বললেই চলে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়ে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয় এবং সেখানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে কাজ করবে। সেই মন্ত্রণালয়ে যদি ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বলা হয়, তাহলে তো সেটা বাস্তবায়ন হবে না। তাই ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় পৃথক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে আমাদের ভোক্তাদের শোষণ করা হচ্ছে। আমাদের দেশের ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। এই ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। কিছুদিন পর পর এই সংকট দেখা দেয়। যেমন—কাঁচা মরিচের দাম বাড়িয়েছে। এখন আবার আলু নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। আমরা ভোক্তারা খুব কষ্টে আছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠাকালীন মহাপরিচালক ও ক্যাব সদস্য মো. আবুল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক ও ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান।

জাতীয়