রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। বুধবার দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। তবে সকাল ৮ থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দুই সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
ফকিরাপুল থেকে নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়াও আশপাশের গলিগুলোতেও নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। একদিকে পল্টন মোড়, কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত অন্যদিকে মতিঝিল, নটরডেম কলেজের অলিতে-গলিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন।
দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ চলছে। এতে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত আছেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় তল্লাশি করছে পুলিশ। সকাল থেকে এ তল্লাশি শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ। সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর তাদের আটক করা হয়েছে।
দলটির নেতারা আরও অভিযোগ করেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকিতে যানবাহনে তল্লাশি করছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতভর নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে বিএনপির এক নেতার দাবি, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ ‘পাওয়া যাচ্ছে না’ বলেও অভিযোগ করেন নেতারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর জেলা বিএনপির নাজমুস সাকিব বলেন, তারা মুঠোফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন না। তাই সমাবেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট দিতে পারছেন না।
রাজপথের আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে থেকে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করবে দলটি। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সফরের মধ্যেই দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। শুক্রবার রাজধানীতে মানববন্ধন বা মানবপ্রাচীরের কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হতে পারে আন্দোলনের সিরিজ কর্মসূচি। তবে দলের একটি অংশ একদফার ঘোষণার পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। একদফার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার রূপরেখাও তুলে ধরবে দলটি। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা ৩৫টি রাজনৈতিক দলও আলাদা মঞ্চ থেকে একই ঘোষণা দেবে।
সমাবেশ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উল্লেখ করে একদফার ঘোষণা দেওয়া হবে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে রাজপথে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা