আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল মানা হচ্ছে না ঘোষণা

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল মানা হচ্ছে না ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চারদিন আগে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত নগরীর বাজারে আগের দামেই বিক্রি হয়েছে। লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন ১৭৯ টাকা ও খোলা সয়াবিন ১৫৯ টাকায় বিক্রি করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এরপর থেকে বাজার থেকে উধাও খোলা সয়াবিন তেল।

এদিকে পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ১১ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাজারে বুধবার থেকে প্রতি লিটার ১০ টাকা কমে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, খোলা সয়াবিন তেলে ৮ টাকা কমিয়ে ১৫৯ টাকা, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৪৩ টাকা কমিয়ে ৮৭৩ টাকা, খোলা পাম তেল লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১২৮ টাকা এবং বোতলজাত পাম তেল ১২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা গত বুধবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানান সংগঠন নেতারা। কিন্তু গতকাল চতুর্থ দিনেও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। অধিকাংশ দোকানে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। আর ঘোষণার পর থেকে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি বাজারে তেল নিয়ে কোনো ধরনের মনিটরিংয়ের খবরও পাওয়া যায়নি।

গতকাল শনিবার নগরীর বাজারগুলোতে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রেয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীর দেউড়ি বাজার, বকসিরহাট, চকবাজার কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা দোকানো ফ্রেশ, রূপচাঁদা, পুষ্টিসহ নানা কোম্পানির এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, দুই লিটার ৩৮০ টাকা থেকে ৩৯০ টাকা, পাঁচ লিটার ৯০০ থেকে ৯৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দামও লিটারে ৮ টাকা কমানোর ঘোষণার পর থেকে বাজারে প্রায় দোকানে খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েকটি দোকানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। যা বিক্রি হওয়ার কথা ১৫৯ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন নেতারা পাঁচ দিন আগে দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে তাদের নতুন দরের তেল আসেনি। বর্তমান যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা ব্যবসায়ীদের আগের কেনা। ফলে লোকসানে বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানান তারা।

খাতুনগঞ্জের পাইকার ও তেল মজুতদার মতিউর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক আগেই কমেছে। দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ছে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে এসে। এর কারণ বাজারে পাইকারদের হাতে আসতে ১০ থেকে ১২ হাত বদল হয়। এতে মধ্যস্বত্ব কারবারিদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য রয়েছে। এখানে একজন পাইকারের কিছু করার থাকে না।

এদিকে ব্যবসায়ীদের এসব কথা শুনতে নারাজ ক্রেতারা। রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা মো. আলতাবুর রহমান নামে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আজকে সয়াবিন কিনলাম ১৯০ টাকা লিটারে। গত সপ্তাহ থেকে দাম কমানোর ঘোষণা শুনছি। এসব সাধারণ মানুষকে সান্ত¦না দেওয়া। কোন পণ্যের দাম উঠতে জানে কিন্তু কমতে জানে না।’

কাজীর দেউড়ি বাজারে আসা মো. আবদুস সালাম নামের এক এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘চারদিন আগে থেকে শুনছি সয়াবিনের দাম কমছে। অথচ দোকানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আর অনেক ব্যবসায়ী বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ রেখছেন।’

এদিকে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন বলে স্বীকার করেছেন বকসিরহাটের ব্যবসায়ী মো. ফারুক সওদাগর বলেন, সরকার যা ঘোষণা দিয়েছে ওই দরে খাতুনগঞ্জের কেউ বিক্রি করছে না। ফলে চড়া দামে কিনে এনে সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে লিটার ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসানে থাকবে। এজন্য খোলা সযাবিন বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

এদিকে বিশ্ববাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুনে প্রতি টন সয়াবিন সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ১৭৫১ ডলার। গতকাল শনিবার পর্যন্ত তা কমে প্রায় ১৫১০ ডলারে নেমেছে। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি টনে কমেছে প্রায় ২৪১ ডলার।

অর্থ বাণিজ্য