রাজপথে মুখোমুখি বিএনপি-আওয়ামী লীগ। পদযাত্রা বনাম শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সজিব নামে এক কৃষক দল নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বহু। আহত সহস্রাধিক। হামলার শিকার ও গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী— দাবি দলটির। পুলিশের গুলি ও? টিয়ারশেলে বগুড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক। ঢাকার মিরপুরে পদযাত্রায় হামলায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শতাধিক। কিশোরগঞ্জে গুলিবিদ্ধসহ বহু লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার খবর পাওয়া গেছে। গুলির ঘটনাও ঘটেছে। গুলিবিদ্ধসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ফেনীতে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে দুদলের কর্মসূচি ঘিরে পুরো ঢাকা শহর জিম্মি হয়ে পড়ে । রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ জ্যামে আটকে থেকে হেঁটেই অফিস-আদালতে পৌঁছেছে; আবার হেঁটেই বাড়িতে ফিরেছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সংঘাতের দৃশ্যপটে জনমনে ভয়াবহ আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। গতকাল ময়মনসিংহে পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে অতিরিক্ত তাপদাহে (হিটস্ট্রোকে) দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সরকারের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেও মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বর থেকেই পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এতদিন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও গত ১২ জুলাই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একইদিন সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ পালটা এক দফা ঘোষণা করে ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে’। গতকাল ঢাকাসহ দেশের জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা করে বিএনপি। একই সময় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে গতকাল সকাল ১০টায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন রুট ঘুরে বিএনপির পদযাত্রা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে বিকাল ৪টায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বেলা ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন দল। দুই ঘণ্টা শোভাযাত্রা করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত যায় আওয়ামী লীগ। এ সময় শাহবাগ- কাঁটাবন-সায়েন্স ল্যাব-কলাবাগান- ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিকে আজ বুধবারও বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। সকাল ১০টায় উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রা শুরু করে বিএনপির পদযাত্রা যাত্রাবাড়ী পৌঁছাবে বিকাল ৪টায়। রুট হবে আব্দুল্লাহপুর-বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্বরোড-নতুন বাজার-বাড্ডা-রামপুরা ব্রিজ-আবুল হোটেল-খিলগাঁও-বাসাবো-মুগদাপাড়া-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’পূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির পদযাত্রাকে তারা ‘বিজয়যাত্রা শুরু’ দাবি করলেও তাকে ‘পতনযাত্রা’ বলছি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তিনি কী বলেছেন? পদযাত্রা, জনযাত্রা, বিজয়যাত্রা। আসলে পদযাত্রা নয়, পরাজয়যাত্রা। পদযাত্রা পতনযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষে কৃষক দল নেতা নিহত : লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সজিব নামে এক কৃষক দল নেতা নিহত হয়েছেন। তার বাবার নাম আবু তাহের। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বাড়ি সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ এলাকায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে লক্ষ্মীপুরে সদর হাসপাতালের চিকিৎক মো. জয়নাল আবদিন তার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেন। স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে শহরের সামাদ মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সজিবের বাম হাতের বাহুতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আঘাত করা হয়।
প্রাণে বাঁচতে তিনি কলেজ সড়কের মমিনউল্যা হাউজিংয়ের পাশের ফিরোজা টাওয়ারের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. হাবিবুর রহমান বলেছেন, নিহত যুবক সজিব কৃষক দলের নেতা। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছে নগরবাসী।
মিরপুরে পদযাত্রায় হামলা, গাড়িতে আগুন : রাজধানীর মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপির পদযাত্রায় হামলা হয়েছে। দলটির অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। গাবতলী থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বাঙলা কলেজ এলাকায় আসার পর এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির পদযাত্রাটির একটি অংশের ওপর সরকারি বাঙলা কলেজের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। তখন পদযাত্রা থেকে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কলেজ গেটের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর চালিয়ে সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে এ ঘটনার পরও পদযাত্রাটি থামেনি, সামনে এগিয়ে যায়। পদযাত্রাটির শেষ অংশ বাঙলা কলেজের সামনে এলে আবারও কলেজের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে মারামারি হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
রাজধানীর গাবতলীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের এই কর্মসূচি শুধু পদযাত্রাই নয়, এটি ‘বিজয় যাত্রা’। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এখনই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নয় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, গতকাল ঢাকায় নির্বাচনের তামাশা দেখেছি। আবারও পরিষ্কার করে বলছি, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। ২০১৪ সালে ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে জয়লাভ করেছে। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করেছে। এ ধরনের ভোট আর হতে দেয়া হবে না। আজ যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এর মাধ্যমে এক দফা দাবি আদায় করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ।
বগুড়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি, কাঁদানে গ্যাস : বগুড়ায় এক দফা দাবিতে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পালটাপালটি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলি ও হামলায় ২০ থেকে ২৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে বিএনপি দাবি করেছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপির হামলায় ছয় থেকে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নওয়াববাড়ি সড়কের রানার প্লাজার সামনে থেকে বিএনপি কার্যালয় পর্যন্ত।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলি করেছে। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলি ও হামলায় ২০ থেকে ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে সাতমাথা অতিক্রম করতে চেয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ চলছিল। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ তাদের সাতমাথার দিকে না যেতে বলে। এতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করা হয়। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আত্মরক্ষার জন্য পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।
খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত শতাধিক : খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পদযাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুতির সময় মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এতে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালালে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজমসহ বেশ কজন আহত হন। এ সময় পৌরসভা অফিসে ভাঙচুর এবং ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পুরো শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা তৈরি হয়। যানবাহন চলাচল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মো. আবছার বলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে বিএনপির লোকজন দলীয় কার্যালয়ে আসার সময় আওয়ামী লীগের লোকজন প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে হামলা করে। পরবর্তী সময়ে আবারও বিএনপি কার্যালয়ে এসে হামলা চালায়। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, যারাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা পালনের সময় পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া করে। তখন তারা পুলিশকে লক্ষ করে পালটা ইটপাটকেল ছোড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখলা এলাকায় দফায় দফায় উভয়পক্ষে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা পদযাত্রা নিয়ে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে রথখলা এলাকা পার হওয়ার সময় পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি খায়রুল আলম ফয়সাল ও মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মো. আশরাফুল ইসলাম আহত হন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি সভাপতি মো. শরীফুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, বিশাল মিছিল নিয়ে রথখলা নূর মসজিদের পাশে আসতেই পুলিশ বাধা দেয় এবং বিনা উসকানিতে অতর্কিতে লাঠিপেটা ও নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। এতে তাদের বেশ কজন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। বিনা কারণে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শরীফুল আলম বলেন, ‘যতই হামলা-মামলা-বাধা আসুক, স্বৈরাচার এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোস্তাক সরকার জানান, বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে রথখলা ময়দান পর্যন্ত। রথখলা ময়দান পেরিয়ে সামনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা করে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
ফেনীতে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, দুই শতাধিক আহত : ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে বিএনপির পদযাত্রা শেষে শহরের ইসলামপুর রোডে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে পুলিশ সদস্য, সাংবাদিকসহ শতাধিক লোক আহত হন। তবে বিএনপির দাবি, তাদের ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংবাদ সংগ্রহের সময় মোহনা টিভি ও স্থানীয় দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তোফায়েল আহমেদ নিলয় এবং মুস্তাফিজ মুরাদ আহত হন। পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে তাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, পদযাত্রা নিয়ে ইসলামপুর এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ করে তাদের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাতে সংঘর্ষে ২০০ নেতাকর্মী আহত হন।
মানিকগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের বাধা : মানিকগঞ্জে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জেলা বিএনপির আয়োজনে পৌর এলাকার চরবেউথা থেকে একটি বিশাল পদযাত্রার র্যালি বের হয়। র্যালিটি বেউথা ব্রিজ পার হয়ে তিন রাস্তা মৌড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে পদযাত্রা সমাপ্ত করেন। জেলা বিএনপি সভাপতি আফরোজা খান রিতা লেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইছিলাম। কিন্তু এই অবৈধ সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশ দিয়ে বাধা দিচ্ছে। কাজেই এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে দাবি করেন তিনি।