অ্যাপের ফাঁদে নিঃস্ব মানুষ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে জমা রাখছে লাখ লাখ টাকা

অ্যাপের ফাঁদে নিঃস্ব মানুষ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে জমা রাখছে লাখ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপের ফাঁদে পড়েছেন হাজারও মানুষ। নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানুষ বিদেশি বিভিন্ন অ্যাপে বিনিয়োগ করে দ্রুত কোটিপতি হতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে ওই সব অ্যাপের প্রচারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ কারণে অফিস খুলে এসব বিদেশি অ্যাপে বিনিয়োগ করে দ্রুত অর্থ উপার্জন করার প্রচারণা চালাচ্ছে একটি চক্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেসবুক প্রোফাইলে নিউজ ফিডে বিভিন্ন অ্যাপের অ্যাড দেখা যায়। এর মধ্যে রাজশাহীতে বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে এমটিএফই নামের একটি অ্যাপ। এ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে দ্রুত কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মানুষের কাছে প্রচার করছে কিছু যুবক। এমটিএফই অ্যাপ অফিস নিয়ে বসেছে নগরীর লক্ষ্মীপুরে। এটি পরিচালনা করেন রাজপাড়া থানা এলাকার সবুজ নামের এক যুবক। তার কথায় অ্যাপের ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। এমটিএফই অ্যাপের প্রচারকারী আরেক যুবকের নাম রুবেল। তার বাড়ি দুর্গাপুর। সে রাজশাহী আরডিএ মার্কেটের এক দোকানের কর্মচারী। সে রাজশাহীসহ দুর্গাপুরের শতাধিক মানুষকে এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে। এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করা একাধিক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কোনো পরিচিত মানুষ ওই অ্যাপের প্রতিনিধি হয়ে তাদের প্রলোভন দিয়েছে। অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হবে ও পাওয়া যাবে। তার মাধ্যমে টাকা দিলে তাদের একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। পরে সারা দিনে ৩০ মিনিট ওই অ্যাপ খুলে বসে থাকতে হয়। সেখানে তাদের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে কিছু পয়েন্ট ডলার হিসেবে জমা হয়। মাঝে মাঝে টাকাও তুলতে পারে তারা। এমটিএফই অ্যাপে প্রচারকারী রুবেল বলেন, ‘আমার মাধ্যমে যদি কেউ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে তার কিছু কমিশন আমার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। বেশি টাকা বিনিয়োগ করলে বেশি কমিশন পাব। এমনভাবে যদি ১০০ জনকে বিনিয়োগ করাতে পারি, তাহলে আমি অফিস পাব ও আমার পদ সিও হবে। এভাবেই হঠাৎ কেউ লাখ লাখ টাকার মালিক হচ্ছে।’ তবে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে দায়ভার তিনি নেবেন না বলেও জানান।

সম্প্রতি রাজশাহীর ডাশমাড়ি এলাকার সবুজ, লিটন, এখলাসসহ কিছু যুবক আলটিমা উইলেট নামের একটি অ্যাপে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেন এলাকার মুনায়েম নামের এক বন্ধুর কথায়। দু-একবার ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন তারা। হঠাৎ অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় গত ২৬ জুন সবুজ আলী বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই অ্যাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ছয়জনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা জেলহাজতে আছেন। এর আগেও রাজশাহীতে মুভি অ্যাপ নামের একটি অ্যাপে মানুষ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছে। মুভি অ্যাপের রাজশাহীর নগরীর শিরোইলে অফিস খুলে বসেছিলেন মানিক নামের এক যুবক। ওই অ্যাপে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী এলাকার শতাধিক মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হন হঠাৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে। ওই ঘটনায় আরএমপি চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে কয়েকজন গ্রেফতার হন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, এসব অ্যাপের কোনো দেশে অনুমোদন নেই। এসব অ্যাপের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব বিষয় প্রতারণার শিকার হয়ে যদি কেউ অভিযোগ দেন, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তথ্য প্রুযুক্তি