নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর নয়াপল্টনে আগামীকাল দুপুর ২টায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কর্মদিবসে জনদুর্ভোগের আশঙ্কায় পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি দেওয়ায় এক দিন পিছিয়ে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাত সাড়ে ৮টার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের সমমনা সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএমপি থেকে জনদুর্ভোগের কারণে উচ্চ আদালতের আপত্তির কথা উল্লেখ করে আমাদের বৃহস্পতিবারের সমাবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ওই দিনের পরিবর্তে শুক্রবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি। আশা করি শুক্রবারের এই সমাবেশে সরকার বা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। তারা যদি এই সমাবেশে বাধার সৃষ্টি করে তাহলে তাদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে বাধা দানকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। বিএনপি মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনের পর সমমনা ৩৬ দলের পক্ষ থেকেও একই দিনে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে গতকাল সকাল থেকে দিনভর বিএনপি কার্যালয় ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকা ঘিরে রাখে শত শত পুলিশ। বিকালে কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সিনিয়র নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানায় পুলিশ। সে অনুযায়ী সিনিয়র নেতারা দলীয় কার্যালয় থেকে সব নেতা-কর্মীকে চলে যেতে বলেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও মাইকিং করে সব নেতা-কর্মীকে বিএনপি অফিসসহ আশপাশের এলাকা থেকে চলে যেতে বলা হয়। তার আগেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক মুলতবি করে নয়াপল্টন কার্যালয় ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে চলে যান। সেখানে তারা বৈঠক করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন এবং সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত জানান। বিএনপি নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়ার পর পুলিশ তাদের ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে অথবা গোলাপবাগ মাঠে করার পরামর্শ দেয়।
নয়াপল্টন কার্যালয়ের অবস্থা : দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরীসহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া আর কাউকে বিকাল ৬টার পর কার্যালয়ে দেখা যায়নি। তারও কিছুক্ষণ পর ছিলেন শুধু রিজভী আহমেদ। নয়াপল্টনে বিকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ের দুই পাশের রাস্তায় দুটি জলকামান ও একটি রায়ট কার দাঁড় করিয়ে রাখে পুলিশ। কার্যালয়ের তিন পাশে কয়েক শ পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয়। বিএনপির কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে পল্টন জামে মসজিদের সামনে পুলিশের একটি দল অবস্থান করে। সেখানে একটি জলকামানও ছিল। কার্যালয়ের উত্তর পাশে অবস্থান নেয় পুলিশের আরেকটি দল। সেখানে একটি জলকামান ও একটি রায়ট কার রাখা হয়। কার্যালয়ের উল্টো দিকে রাস্তায় পুলিশ সদস্যদের আরেকটি দল অবস্থান নেয়। তবে নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, পুরানা পল্টন লাইন, শান্তিবাগসহ আশপাশের এলাকার অলিগলি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীতে পরিপূর্ণ ছিল। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, তাই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতরাতে সংবাদ সম্মেলনে মহাসমাবেশের তারিখ পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়ার পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, নয়াপল্টন কিংবা গোলাপবাগে যেখানেই বিএনপি মহাসমাবেশ করুক না কেন, আবারও নতুন করে ডিএমপিতে আবেদন করতে হবে। ডিএমপির অনুমোদন ছাড়া কোথাও সমাবেশ করা যাবে না। কারণ ছুটির দিনেও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। তাছাড়া মহররমের একটি বিষয় রয়েছে। এদিকে শুক্রবারের সমাবেশের বিষয়টি জানিয়ে গতরাতে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ চিঠি দিয়েছেন।
রাতে দেড় শ নেতা-কর্মী আটকের দাবি : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসসহ রাজধানীর হোটেল মিডওয়ে থেকে দেড় শ নেতা-কর্মীকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। বিএনপির মহাসমাবেশের প্রাক্কালে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের হিড়িক চলছে। তিনি এর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। গতকাল রাত ১২টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরও বলেন, বাসায় বাসায় তল্লাশি ও গ্রেফতার চলছে। হোটেল মিডওয়ে থেকে পুলিশ প্রায় ১৫০ জনকে থানায় নিয়ে গেছে।