নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করে সাংগঠনিক শক্তির জানান দিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের দুই সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের আয়োজনে গতকালের শান্তি সমাবেশ ছিল যেন তরুণের মহাসমুদ্র! মনে হচ্ছিল তারুণ্যের উত্তাল তরঙ্গের যেন শুরু আছে শেষ নেই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থানের ঘোষণার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করলে আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেব। রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। চোখ রাঙাবেন না, দেশি-বিদেশি যারাই আজকে চোখ রাঙাচ্ছেন, তাদের বলে দিতে চাই আমাদের শেকড় এ মাটির অনেক গভীরে। আমাদের চোখ রাঙিয়ে উৎখাত করা যায় না, যাবে না। বিএনপি- জামায়াতের হত্যা, ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশের আয়োজক যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পাঁচ দফা ঘোষণা : শান্তি সমাবেশে ‘বিএনপি-জামায়াতের হত্যা, ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের’ বিরুদ্ধে পাঁচ দফা ঘোষণা দেওয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৫টায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এ যৌথ ঘোষণা দেন। দফাগুলো হচ্ছে- ১. ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজকে নিয়ে সংঘটিত আগুনসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য প্রতিহত করব এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সক্রিয় থাকব। ২. বাংলাদেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। ৩. মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকব। ৪. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করব। ৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বদা সোচ্চার থাকব এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকব।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতা পেয়ে গেছেন? লাফালাফি করছেন। কোথায় ক্ষমতা? যত লাফালাফি, যত তাফালিং করেন… ফখরুল সাহেব তারেক জিয়া এই লাফালাফিতে কাজ হবে না। যতই তাফালিং করেন ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বহু দূরে চলে গেছে। ওইটা খুঁজে পাবেন না। লাফালাফি করবেন না। রাজনীতির খেলার আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আন্দোলন করে হারানো যাবে না, তাহলে নির্বাচন। নির্বাচনে আসবেন না! কিন্তু মনোনয়ন বাণিজ্য ঠিকই তো করেছেন।
দুপুর পর্যন্ত ভ্যাপসা গরম, বিকালে মুষলধারে বৃষ্টি এমন বৈরী আবহাওয়া তিন সংগঠনের মিছিলের স্রোতকে থামাতে পারেনি। বিশাল সমাবেশে বিএনপির এক দফার দাবির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা রাজপথে থেকেই সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের দাঁতভাঙা জবাব দেবে। কোনো গায়েবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সংবিধান অনুযায়ীই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী শীল, গত ২০ জুলাই খুলনায় যুবলীগের সমাবেশে যোগদান করতে গিয়ে বিএনপির ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত নড়াইলের আজাদ শেখের ছোট ভাই সাজ্জাদ শেখ, মায়ের কান্নার আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিন- তিনজনই পৃথক পৃথক ঘটনার বর্ণনা করেন। এ সময় পূর্ণিমা রানী শীলের কথা শুনে অনেককে কান্নায় চোখ মুছতে দেখা যায়। তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথ ঘোষণা পাঠ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।
বিকাল ৩টায় শান্তি সমাবেশ শুরুর আগেই বেলা ১১টা থেকেই বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট অভিমুখে মিছিলের ঢল নামে। কখনো প্রখর রোদ, আবার মুষলধারে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য মিছিলের তোড়ে সমাবেশ শুরুর আগেই পল্টন, মুক্তাঙ্গন, জিপিও, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান, গোলাপ শাহ মাজার হয়ে নগরভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে সংসদ সচিবালয় রাস্তা, জাতীয় স্টেডিয়াম হয়ে নবাবপুর পর্যন্ত চারদিকে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এই তিন সংগঠনের লাখো তারুণ্যের শক্তির তীব্র স্রোতে শান্তির সমাবেশটি রীতিমতো বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। শুধু ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগই নয়, ঢাকার আশপাশসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের বিশাল বিশাল মিছিল আসে সমাবেশস্থলে। ৩টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নামলেও নেতা-কর্মীদের কাকভেজা হয়েই সমাবেশস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে অসংখ্য ব্যানারের কারণে সমাবেশে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। বিএনপির সমাবেশের বিপরীতে মাত্র দেড় কিলোমিটার ব্যবধানে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিত ঘটিয়ে রাজধানীতে বিএনপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বর্ণাঢ্য মিছিল সবার নজর কাড়ে। রংবেরঙের টুপি, গেঞ্জি, টি-শার্টসহ নানা রঙের পোশাক পরে ব্যানার, ফেস্টুন ও তিন সংগঠনের পতাকা নিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে পুরো এলাকাই তারুণ্যের মহাসমাবেশে রূপ নেয়। সকাল থেকেই মঞ্চ থেকে দেশাত্মবোধক গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’, জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘শেখ হাসিনা সরকার, বারবার দরকার’ আর দলীয় প্রতীক নৌকার গগণবিদারী স্লোগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই এলাকা ছিল প্রকম্পিত। সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মুখেই ছিল সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান। শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে উল্লাপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার পূর্ণিমার আর্তনাদ, নড়াইলে তারুণের সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে কুপিয়ে হত্যার শিকার আজাদ শেখ রুবেলের ভাই সাজ্জাদ শেখের খুনিদের বিচার দাবি এবং জিয়াউর রহমানের আমলে মাত্র দুই মিনিটের প্রহসনের রায়ে ফাঁসিতে হত্যার শিকার পরিবারদের নিয়ে গঠিত ‘মায়ের কান্নার’ আহ্বায়ক কামরুজ্জামান খান লেলিনের সেই সময়ের ভয়াল মর্মন্তুদ ঘটনা উপস্থিত লাখো তরুণের মনকে নাড়া দেয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশের বড় অর্জনের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্জন নিয়ে এসেছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় নেত্রী, জননন্দিত নেত্রী।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোথায় দাঁড়াবেন? আমরা ছেড়ে দেব? সংঘাত করব না। আমরা সংঘাত চাই না। সংঘাতের জন্য এ সমাবেশ করছি না, সমাবেশ করছি ২০১৩ ও ’১৪ সালে যারা আগুন দিয়ে সন্ত্রাস করেছে তাদের মোকাবিলা করে জনগণের সম্পত্তি ও জানমালকে পাহারা দিতে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সেটাই করে যাচ্ছি।
একই দিনে কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে কেউ কেউ বলে ওরা ডেট দিলে আপনারাও একই দিন ডেট দেন। যিনি বলেন, তাকে সবিনয়ে বলছি ২০১৪, ’১৫ সাল তিনি বোধহয় দেখেননি। আমরা চুপ করে থাকলে বিএনপি কোন মূর্তিতে আবির্ভূত হবে সেটা দেখেন নাই। তাই শপথ নিয়েছি আগুন নিয়ে এলে পুড়িয়ে দেব হাত। ভাঙচুর করতে এলে হাত ভেঙে দেব। নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আসবেন, শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাবেন। সংঘাত পরিহার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন সংঘাত করব?
বিএনপির এক দফা আন্দোলন প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, এক দফা কোথায় আছে! বিএনপির এক দফা নয়াপল্টনের কাদাপানিতে আটকে গেছে। মনে আছে গোলাপবাগের গরুর হাটে হোঁচট খেয়েছে। আর এক দফা খাতে পড়ে গেছে। এই এক দফা কোনো দিন ক্ষমতার স্বাদ পূর্ণ করতে পারবে না।
তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছে আর দেশে ফখরুল, আমীর খসরুরা লাফালাফি করছে এমন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারেক রহমান ভিডিওতে নির্দেশ দেয়। লন্ডনে বসে পুলিশকে ধমক দিচ্ছে। প্রশাসনকে ধমক দিচ্ছে। তারেক রহমান বলছে ফখরুলকে আন্দোলনে টাকার অভাব হবে না। তারেক রহমান তোমার বাবা দম্ভ করে বলেছিল- মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় তোমার বাবা? কোথায় আজ। ক্ষমতা কোথায় গেল। তুমি তো ক্ষমতা এখনো দেখনি। কাদের বলেন, রঙিন চশমার ফাঁক দিয়ে দুনিয়াটাকে রঙিন দেখায়। কিন্তু ফুলের ভিতর সাপ থাকে। ফুলের ভিতরও বিষধর সাপ আছে বাংলাদেশে। তারেক রহমান এত টাকা পেল কোথায়? হাজার হাজার কোটি টাকা তারা পেল কোথায়? পাচার করেছে তারেক। সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছে। সেই তারেক রহমান এখন মির্জা ফখরুলের নেতা। এই নেতা মানে কেউ? তারেক রহমান যতই লন্ডন থেকে আস্ফালন করছে ততই তার বিরুদ্ধে ক্ষেপছে বাংলার মানুষ।
কারা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানকে অর্থ দিচ্ছে সেই খবর সরকারের কাছে রয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, কার কত টাকা! কারা কারা ঘন ঘন লন্ডনে যাচ্ছেন। তারেক রহমানের হাতে ডলার তুলে দিচ্ছেন আমরা জানি। কারা কারা যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এমপি হবেন। নমিনেশন বাণিজ্য করবেন? সে জন্য এখনই তাকে হাত করছেন। টাকা দিচ্ছেন। সে নিজে কোনো দিন আসতে পারবে? তার কোনো গ্যারান্টি আছে? নমিনেশনের জন্য, ভবিষ্যতের ব্যবসার জন্য… তারেক রহমান টাকা লেনদেন করছে।
তিনি বলেন, লন্ডনের যাত্রী প্রতিদিনই বাড়ছে। ওখানে গিয়ে ডলার দিচ্ছে। ফখরুলকে বলে আন্দোলনের টাকার অভাব হবে না। শুনতে শুনতে ফখরুল মঞ্চ থেকে পড়ে গেছে। আসলে তারেক জিয়ার ধমক খেতে খেতে বেচারার অবস্থা টাইট। ওই ধমকে মঞ্চ ভেঙে বিএনপির নেতারা পড়ে গেছে। চোখ রাঙানি দিচ্ছে, সেটাতে দলটির নেতারা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি দল সেই দলের নেতা তারেক রহমান, ফখরুল, আমীর খসরুদের কথাবার্তার দম্ভ শুনলে মনে হয় তারা আইন মানে না। সুপ্রিম কোর্ট মানে না। কথায় কথায় লন্ডন থেকে কোর্টকে ধমক দিয়ে কথা বলে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভোট বিষয়ে ১২ কংগ্রেসম্যানের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, কোথায় নাকি জাতিসংঘ নির্বাচন তত্ত্বাবধান করবে। তাদের কোটি কোটি টাকা। একেক সময়ে আমেরিকার কিছু কংগ্রেসম্যানকে টাকা খাওয়ায়। লবিস্ট নিয়োগ করে টাকা তাদের কিছুজনকে দিয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসাডরের কাছে চিঠি লেখে বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভোট করতে হবে। এ দুঃসাহস তারা পেল কোথায়?
ওবায়দুল কাদের বলেন, (বিএনপি নেতা) আমীর খসরু বলেন- গণভবন নাকি ছেড়ে দিতে হবে! গণভবন তোমার বাবার! জনগণ শেখ হাসিনাকে গণভবনে বসিয়েছেন। যত দিন জনগণ চাইবে তত দিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। গণভবন থেকে হটাবেন! এত সোজা? আমরা চেয়ে চেয়ে ললিপপ খাব?
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা ভুয়া ভোটার করেছে। ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছে। তাদের হাতে আমাদের এই মাতৃভূমি, ক্ষমতা কোনো দিন আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো অবস্থান করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের বিষয়ে কাদের বলেন, তিনি কোনো দেশ ভ্রমণ করতে যাননি। গেছেন বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচাতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হতাশ হবেন না। কারও চোখ রাঙানির পরোয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা করেন না। তিনি বলেন, খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে। লুটপাট, অর্থ পাচার, ভোট চুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে তারেকের বিরুদ্ধে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। ভুয়া এক দফার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলার মানুষ সমৃদ্ধি চায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার গ্যারান্টি চায়। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। জনগণের রায়ে নির্বাচিত জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুতি থেকে একচুলও বিচ্যুত না হয়ে এগুলো বাস্তবায়ন করে চলেছেন। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি সন্ত্রাস করে অতীতে সফল হয়নি। আগামীতেও সফল হতে পারবে না। আমাদের একটিই বক্তব্য- সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১২৬ ধারা অনুযায়ী আমরা নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের বয়সে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এবারের যুদ্ধে তোমাদেরও শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত হটাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, সদরঘাট, লালবাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে আজকের সমাবেশ। বাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে, শান্তির পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আজকের এই সমাবেশ মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মের সমাবেশ। পল্টনের সমাবেশ একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সমাবেশ। তারা চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অর্জন তা নস্যাৎ করতে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চায়। তাদের কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপি- জামায়াতের অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে তারা আবারও অগ্নিসন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসতে চায়। আমাদের আজকের এই তারুণ্যের সমাবেশ প্রমাণ করে বাংলার জনগণ বারবার শেখ হাসিনার উন্নয়নের সরকারকেই চায়।
প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচন যত কাছে আসছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত তত বেশি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। ওরা চেষ্টা করছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটি অস্তিত্বহীন ভূতুড়ে সরকার কায়েম করতে। তারেক রহমান লন্ডনে বসে পরিণত হয়েছেন লাদেন রহমানে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, নেতৃত্বশূন্য বিএনপি বুঝে গেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না। এ জন্যই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, অতীতে যেভাবে বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্র যুবক শ্রমিকরা লড়াই করেছে আগামী নির্বাচনেও একইভাবে লড়াই করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ওরা বাংলাদেশের মানুষের শান্তি নষ্ট করতে চায়। আমরা শান্তি রক্ষা করব। দুর্নীতির মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে শান্তি বিনষ্ট করতে যারাই আসবে তাদের মোকাবিলা করব। আমরা নৈরাজ্য চাই না। আমরা শান্তির সৈনিক। শান্তির সংগ্রাম, উন্নয়নের সংগ্রাম, সম্প্রীতির সংগ্রাম চালিয়ে যাব।
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার কর্মীরা লড়াই করবে অপশক্তির বিরুদ্ধে। নির্বাচনের মাঠে সন্ত্রাস করলে লক্ষ তারুণ্যের এই সমাবেশ প্রতিহত করবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর যেভাবে বিজয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও জয় আসবে। গণতন্ত্র, শান্তি, সংবিধান এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব।
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশ থেকে সেই টাকা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আগামী পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করেছিল। বাংলাদেশের জঙ্গিদের উত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে তারেক রহমান। ষড়যন্ত্র করেছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র ভারতের সন্ত্রাসীদের কাছে পাচারের ষড়যন্ত্র করে ধরা পড়েছিল। সেই তারেক আজ বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আমরা চাইলে ওরা দশ মিনিটও টিকতে পারবে না। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন এই বাংলাদেশে আর কোনো দিনই পূরণ হবে না।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যারা মানুষ হত্যার রাজনীতি করবে, অগ্নিসন্ত্রাসের উৎসব করবে তাদের দর্পচূর্ণ করার জন্য বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ প্রস্তুত রয়েছে। আজকে সবেমাত্র শুরু হলো। এটাতো ট্রেইলার। পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, নেতা-কর্মীরা যখন পল্টনে বৃষ্টিতে ভেজে নেতা তখন বসে থাকে লন্ডনে। এমন নেতা কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, লুটপাটের যুবরাজ সে, আগাগোড়া চোরের খনি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা যদি তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে রাস্তায় বসে পড়েন আমরাও আওয়ামী লীগের কোটি কোটি লোক ঢাকার রাস্তায় বসে পড়ব। আমরাও দেখব কত ধানে কত চাল।