চলতি বছরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি নাগাদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও অক্টোবরের আগে তফসিল ঘোষণা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সহযোগীদের আন্দোলন— সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও তাদের অধীনেই নির্বাচন করতে অনড়। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে হঠাৎ করেই মুখোমুখি অবস্থানে অবতীর্ণ হয়েছে দু’দল। ফলে ক্রমেই বদলাচ্ছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। এরই মধ্যে সংঘাতেও রূপ নিয়েছে। যা আরও কঠিনতর হতে পারে বলেও ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে অতীতের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ব্যাপক সংঘাতের শঙ্কাও করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথে রাজনৈতিক সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে মূলত গেল শনিবার। তাও দাবি আদায়ে অনড় দলটির রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে। একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দুই পক্ষের এমন অবস্থান ও জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে রাতেই কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু কর্মসূচি করার বিষয়ে বিএনপি অনড় থাকলেও একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরে আসে। তবে, সতর্ক পাহারায় থাকার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। যদিও দিন পশষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও রাজপথে থাকতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অবস্থান কর্মসূচি পালনরত অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপরীতে জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য অবস্থান নেয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাঙ্গানো চোখকে উপেক্ষা করেই অবস্থান কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতেই বাঁধে সংঘর্ষ। ঢাকায় অন্তত পাঁচটি জায়গায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মূলত পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে এ সংঘর্ষ বাধে। বিশেষ করে, রাজধানীর ধোলাইপাড় ও মাতুয়াইল এলাকায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একই সময় সতর্ক পাহারার নামে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ভাঙচুর করা করা হয় বেশ কয়েকটি যানবাহনও। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি গাড়িতে। বিএনপির সিনিয়র দুই নেতাসহ অনেকেই আহত হন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং আগের সহিংস অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কোনোভাবেই তাদেরকে এমন সহিংস কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ওপর হামলা চালিয়েছে। বিএনপি কখনোই সহিংস রাজনীতি চায় না। যত বাধা আসুক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠেই থাকব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অবস্থান কর্মসূচির নামে বিএনপি রাজধানীকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা বাস ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। সংঘাতের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরাই দায়ী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। অগ্নিসন্ত্রাস তারাই চেয়েছিল এবং করেছে। তারা মোট সাতটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করেছে। কয়েকজন পুলিশকে বেধড়ক পিটিয়েছে। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ২০১৩-১৪ সালের দিকেই হাঁটছে। তাদের সেই পুরোনো রূপই দেখা যাচ্ছে। তাদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে, আমরা আক্রমণ করতে যাব না। কিন্তু গায়ে পড়ে আসলে তো ছাড় দেবো না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির অপরাজনীতি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে। এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ একযোগে হামলা চালাচ্ছে। তারা সিনিয়র নেতাদেরও রেহাই দেয়নি। যত যাই হোক ফয়সালা রাজপথেই হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। বিএনপি সহিংস রাজনীতি চায় না। হেনস্তা ও আটক করে বিএনপির নেতাদের কাছে খাবার ও ফুল পাঠানো সরকারের নাটক।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা?। পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৫০০ জন নেতাকর্মী আহত ও ১২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এমন বাস্তবতায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘাত হতে পারে। এর মূল কারণ, দেশের প্রধান বড় দুটি দলের বিপরীতমুখী অবস্থান। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দুই পক্ষকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা উচিত। যদি তা না হয় তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করছে।