ঢাকায় রাজনীতির সিরিজ কর্মসূচির কারণে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে

ঢাকায় রাজনীতির সিরিজ কর্মসূচির কারণে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে

ঢাকায় রাজনীতির সিরিজ কর্মসূচির কারণে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছেন। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও নিরাপদবোধ করছেন না অভিভাবকরা। রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরে থাকেন আমির হোসাইন। তার দুই সন্তান মতিঝিল নটরডেম কলেজে পড়েন। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয়। বড় কর্মসূচি হলে স্কুলের সামনে পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দেখা যায়। তাই অফিসের ফাঁকে নিজেই তিনি সন্তানদের নিয়ে আসেন। একলা ছেড়ে দেন না। গত শনিবার মাতুয়াইলে যে ঘটনা টেলিভিশনে দেখলাম এখন নিজদেরও ঢাকায় চলতে স্বাভাবিকভাবে ভয় হচ্ছে।

এদিকে ঢাকার উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক মহলও নজর রেখেছে, গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি তারাও নানা বিবৃতি দিচ্ছে। আজও ঢাকায় রয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে দণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলার যৌথ উদ্যোগে সমাবেশ পালন করবে। একইভাবে জুমার নামাজের পর সারা দেশে জেলা ও মহানগরে এ কর্মসূচি পালিত হবে। এদিকে আজ দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথভাবে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। তিন দফা দাবি আদায়ে এ সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল, আলেম-ওলামা ও জামায়াত আমিরের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ সমাবেশ। তবে দুটো সমাবেশ ঘিরে এখন পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি পাওয়া যায়নি। ঢাকায় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় এ জন্য বিভিন্ন স্পটে অবস্থান করবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় পুলিশের জলকামান, রায়টকার দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই বিএনপির শক্ত অবস্থানের কারণে পুলিশকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে, দিতে হয়েছে মহাসমাবেশের অনুমতি। পুলিশ সূত্রের ভাষ্য, মহাসমাবেশের অনুমতি দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারত। সংঘাত খারাপ অবস্থানে পৌঁছে যেত। তাই সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সে জন্য পুলিশ দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত বেঁধে দিয়ে অনুমতি দিয়ে দেয়। বিএনপিও সেই মহাসমাবেশে লাখো নেতাকর্মী উপস্থিত করে। গোয়েন্দা সংস্থার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির তৃণমূল থেকে যারা ঢাকায় চলে এসেছেন তাদের নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নেই দলীয় হাইকমান্ডেরও। ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ ও ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে মাতুয়াইলে হামলায় পুলিশকেও পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে। বিরোধীরা ঢাকাকে টার্গেট করে রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

বিএনপি-জামায়াতের শোডাউনকে ঘিরে আজ ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে উত্তেজনা এখনো রয়েই গেছে। ব্যাপক শোডাউনকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানামুখী শঙ্কাও। একই দিনে সমাবেশ ও মহাসমাবেশ করার ঘোষণায় একদিকে যেমন তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি জনমনে শঙ্কা রয়েছে সংঘাত-সহিংসতারও। মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগও। তারাও ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপি হামলা মামলার ডকুমেন্ট জমা দিচ্ছেন কূটনৈতিকদের।

জানা গেছে, বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বিএনপি। বিশেষ করে গত ২৮ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশে বড় জমায়েতের বিষয় এবং ২৯ জুলাই রাজধানীর চার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দল কীভাবে হামলা, গুলিবর্ষণ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে দলের নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে, সে ঘটনা তুলে ধরেছে দলটি। গত বুধবার বিকেলে গুলশানের হোটেল লেকশোরে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠক হয়। প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, চীন, রাশিয়াসহ ২৫টি দেশের কূটনীতিক অংশ নেন। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কূটনীতিকদের দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। সেখানে কে কী বলছে, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের আন্দোলনের মূল বিষয় হচ্ছে— এই সরকার যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে, জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। জনগণের দাবি— এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কে কী বলল না বলল, তাতে আন্দোলন দমন করা যাবে না।
প্রস্তুতি জামায়াতের, অনুমতি দেয়নি ডিএমপি : আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ ব্যাপক শোডাউনের টার্গেট নিয়েছে। সমাবেশ সফল করতে দুই মহানগরীতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিলি করছে প্রচারপত্র। গঠন করেছে সমাবেশ বাস্তবায়ন উপকমিটি, সমন্বয় কমিটি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কমিটি।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এখন পর্যন্ত তাদের অনুমতি দেয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ধরনের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে গণমাধ্যমকে জানান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘আমরা জামায়াতকে সমাবেশ করার কোনো অনুমতি দেইনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যাগে তিন দফা দাবি আদায়ে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছে জামায়াত। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল, আলেম-ওলামা ও জামায়াত আমিরের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এই সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি।

এর আগে গত ২৪ জুলাই দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তিন দফা দাবি আদায়ে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত ২৮ জুলাই সারা দেশের মহানগরীগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর গত ৩০ জুলাই জেলা শহরগুলোতে একই দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াত। পরে ১ আগস্ট বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। ডিএমপি এ সমাবেশের অনুমতি না দিলে ৪ আগস্ট আবার সমাবেশের ঘোষণা দেয় জামায়াত। দলটির প্রচার বিভাগ বলছে, ‘জামায়াতের এসব কর্মসূচি পালনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতার পরিবর্তে বাধা দিয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে, যা দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে। যা প্রমাণ করেছে, জামায়াত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনে বদ্ধপরিকর ছিল। এবারও জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করতে মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ে বৈঠক করে প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার আদায়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ৪ আগস্টের সমাবেশ নির্বিঘ্নে করার জন্য জামায়াত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে।

জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ  বলেন, ‘আমরা সমাবেশের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা আশা করছি, পুলিশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেবে না। সভা-সমাবেশ করা অবশ্যই আমাদের অধিকার।’

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ