পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তার লাহোরের বাসভবন থেকে আলোচিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেডারেল রাজধানীর একটি স্থানীয় আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এই মামলায় তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি।
তোশাখানা কি?
তোশাখানা মূলত একটি ফার্সি শব্দ যার মানে গুপ্তধন রাখার ঘর। পাকিস্তানে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তোশাখানা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে একটি বিভাগ। অন্যান্য সরকার ও রাজ্যের প্রধান এবং বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে দেশটির শাসক, সংসদ সদস্য, আমলা এবং কর্মকর্তাদের দেওয়া মূল্যবান উপহার সামগ্রির সংরক্ষণশালা হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই তোশাখানা।
তোশাখানায় বুলেটপ্রুফ গাড়ি, সোনার ধাতুপট্টাবৃত স্যুভেনির এবং দামী পেইন্টিং থেকে শুরু করে ঘড়ি, অলঙ্কার, পাটি এবং তলোয়ারের মতো মূল্যবান জিনিস সংরক্ষিত রয়েছে।
ইমরান খান।
তোশাখানা পরিচালনাকারী নিয়মের অধীনে সরকারি কর্মকর্তারা শর্ত মেনে কমদামি কিছু উপহার নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন। কিন্তু ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাপ্ত উপহারগুলো অপ্রত্যাশিত মূল্যে কিনেছেন এবং অতিরিক্ত লাভের আশায় তা খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন, এমন অভিযোগের পর থেকেই তোশাখানা মামলা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।
সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ৭০ বছর বয়সী ইমরান খানের ওপর ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় দখলে থাকা উপহার সামগ্রি কেনা-বেচা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। মামলায় উপহারগুলোর বিক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলার।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, উপহারের মধ্যে ছিল রাজপরিবারের দেওয়া ঘড়ি। তারা আগে অভিযোগ করেছে যে খানের সহযোগীরা সেগুলো দুবাইতে বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়াও উপহারের মধ্যে সাতটি হাত ঘড়ি যার মধ্যে ছয়টি রোলেক্সের তৈরি এবং সবচেয়ে দামি একটি ‘মাস্টার গ্রাফ লিমিটেড সংস্করণ’ ছিল যার মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ডলার।
ইমরান খান।
জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি তদন্ত করতে রেফারেন্স পাঠিয়েছিলেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে, নির্বাচনী সংস্থা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দুর্নীতির জন্য দোষী ঘোষণা করে এবং ইসলামাবাদের একটি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে।
দীর্ঘদিন ধরে ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই মামলা চলার পর অবশেষে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শাস্তি হিসেবে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পাশাপাশি তাকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।