অর্থ পাচার অনুসন্ধানের নির্দেশ এস আলম ১ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে কি না তিন সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন হাই কোর্ট

অর্থ পাচার অনুসন্ধানের নির্দেশ এস আলম ১ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে কি না তিন সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে বিদেশে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। ইংরেজি দৈনিকটির খবর অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা তহবিল স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৭ কোম্পানিকে দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে এবং সেই তালিকায়ও এস আলমের নাম নেই। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন হাই কোর্ট। রুলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে মানি লন্ডারিং রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশিত প্রতিবেদনের অভিযোগ অনুসন্ধানে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে পত্রিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে অংশ নেন। পরে সাইফুদ্দিন খালেদ সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে হাই কোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে অর্থ পাঠানোর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে অর্থ বাইরে পাঠানো হয়েছিল কি না, তা জানিয়ে হাই কোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যে নথির ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তা দুই মাসের মধ্যে আদালতে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট পত্রিকাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, এই প্রতিবেদনটি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আমরা নিয়ে আসি। আদালতে আমি বলি, আগে ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করত, আমাদের টাকা-পয়সা সব নিয়ে যেত। সেই ব্রিটিশদের তো আমরা বিদায় দিয়েছি। তবে এখন এমন সুবিধা হয়েছে যে বিদেশিদের আসা লাগে না, আমরাই নিয়ে বিদেশিদের টাকা দিয়ে আসি। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে এই ব্যাপারে বিরাট কষ্ট পেতেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘যদি এস আলম অর্থ পাচার না করে থাকে তবে সেটা এফিডেভিট আকারে দাখিল করুক।’ ‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি ইংরেজি দৈনিকে গত ৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা তহবিল স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৭ কোম্পানিকে দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে এবং সেই তালিকায়ও এস আলমের নাম নেই।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নথি ঘেঁটে জানা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন, সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তাঁর নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে এস আলমের কেবল দুটি হোটেল ও একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনা ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে আরও দেখা যায়, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ