দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। তারা অভিযোগ করেছেন, অনেক এলাকায় মন্ত্রী এমপিরা দলের বাইরে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের খুব একটা মূল্যায়ন করেন না। এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তারা নেতাকর্মীদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেন না। এসব কারণে অনেক জায়গায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ অসন্তুষ্ট। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। গতকাল গণভবনে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে পাঁচ হাজারের মতো প্রতিনিধি অংশ নেন। সভায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ৪৩ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, পক্ষপাতপূর্ণভাবে টিআর-কাবিখা দিয়ে অনেক এমপি এলাকায় বদনাম করছেন এবং তারা মাই লীগ তৈরি করেছেন। শেখ হাসিনার মনোনয়ন পেয়ে অনেকে শেখ হাসিনার চেয়ে নিজেকে জনপ্রিয় মনে করেন বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের অন্তত দুজন নেতা। তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, কিছু কিছু এমপি টিআর-কাবিখা নিয়ে অনিয়ম করেন, দুর্নীতি করেন।
টাকা খেয়ে কোনো কোনো এমপি বিএনপি-জামায়াতের জন্য চাকরির সুপারিশ করেন। ফলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তৃণমূলের একাধিক নেতা আওয়ামী লীগের অন্তঃকলহ এবং বিভক্তির জন্য এমপিদের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন। এইসব এমপিদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতারা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আহ্বান জানান।
প্রায় ৭ ঘণ্টার আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সভায় যেসব অভিযোগ এসেছে ভবিষ্যতে এমন যাতে আর না ঘটে সবাইকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে যেসব নেতাকে দলীয় প্রার্থী করা হবে তাদের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কে মনোনয়ন পেলো আর কে পেলো না তা নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না। এ সময় তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হাত তুলে নেতাদের সমর্থন জানাতে বললে উপস্থিত সবাই হাত তুলে সমর্থন জানান।
বৈঠকে জেলা, উপজেলা, মহানগর ও পৌর শাখা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া স্থানীয় এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বৈঠকে বেশ কয়েকটি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভারপ্রাপ্ত থেকে পুরো দায়িত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন।
গতকাল বিশেষ বর্ধিত সভার মধ্যদিয়েই মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু দিক নির্দেশনাই নয়, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন কীভাবে দেয়া হবে বা কারা মনোনয়ন পাবেন না সে সম্পর্কেও তিনি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। দলীয় নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সম্পর্কে কড়া বার্তা দিয়েছেন। দলে ভিন্নমতাবলম্বীদের কোনো জায়গা থাকবে না বলে স্পষ্ট সতর্কবার্তা জানিয়েছেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের বক্তব্য এবং বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নেতাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠক আহ্বান করেন। এদিকে বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে গণমাধ্যমকর্মীদের অনুষ্ঠানস্থল ছাড়ার অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষ বর্ধিত সভায় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন প্রথমে বক্তব্য রাখেন। তারপর বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান বক্তব্য রাখেন। এ পর্বটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে যারা এসেছেন আগামী নির্বাচনের মনোনয়নে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তারাই দলের জন্য ডেডিকেটেড।
এসময় তিনি আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালীর সবক’টি আসন নৌকাকে উপহার দেয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমার জেলার অন্য কোনো জায়গায় তেমন দলীয় সমস্যা নেই। কিন্তু বাউফলে কেন যে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হাতাহাতি হয় তা বুঝি না। আমি মনে করি কেন্দ্র থেকে বাউফল নেতাদের ঢাকায় ডাকতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ সময় বর্ধিত সভায় উপস্থিত বাউফলের কয়েক নেতা এর মৃদু প্রতিবাদ জানান। তারা বক্তব্যের মাঝেই উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। এরপরই বক্তব্য রাখেন বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল কবির। তিনি বলেন, নৌকার সঙ্গে যারা প্রতারণা করে তাদেরকে সমমর্যাদা দেয়া হয়। এতে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে নৌকা জয়যুক্ত হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাদাত বলেন, যারা বিএনপি করে তারাও এখন স্বীকার করে যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। নিজেদের কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করা খুব সহজেই সম্ভব।
বর্ধিত সভায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান বলেন, আমি হলে ভালো, অপরে হলে খারাপ, এই রাজনীতি চলছে। এই সাইজ করার রাজনীতি চলছে। আমরা অনেকেই এই সাইজ করার রাজনীতি করি। এটা বন্ধ করতে হবে। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বর্ধিত সভা থেকে কী ধরনের বার্তা পেলেন জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। আমরা তার কাছ থেকে একটাই বার্তা পেয়েছি। তাহলো- আগামী নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করে জিতিয়ে আনতে হবে।
ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও উপজেলার অনেক নেতা মানবজমিনকে বলেন, সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনার পর সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, সবাই মিলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি জনগণ। আমরা কারও কাছে মাথানত করি না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে জয়যুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বর্ধিত সভায় উপস্থিত দলের নেতারা হাত তুলে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আহ্বানের প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই, জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু। আওয়ামী লীগ কেবল জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগই শুধু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা নির্বাচনের সময় দেশবাসীর কাছে আমাদের অঙ্গীকার করে থাকি। আমরা কতোটুকু করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে কী করবো, তা আমরা জনগণকে বলি। এ প্রসঙ্গে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের বলেন, আমি চাই সবাই এটা মাথায় রেখে একসঙ্গে কাজ করবেন।
এসময় শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের অর্জন তৃণমূলের মানুষের সামনে তুলে ধরতে নির্দেশনাও দেন। একইসঙ্গে আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে স্মরণ করিয়ে তিনি দলকে শক্তিশালী করতে বলেন এবং জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করার আহ্বান জানান। সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭-এর ২৩শে জুন এ ধরনের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ মর্যাদা পেয়েছে। এ জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের কাছ থেকে আমি জানতে চাই তারা কি চান বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে চলুক। তিনি বলেন, আপনারা বাংলাদেশের জনগণকে প্রশ্ন করবেন। কারণ তারাই ভোটের মালিক। তারা যদি চায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, তাহলে নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। আর আওয়ামী লীগ ভোট পেলেই এটা সম্ভব হবে। তাছাড়া অন্য কেউ এটা করবে না।
ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, যা বাংলাদেশে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেদিন বিকালে জরুরি অবস্থা জারির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। তিনি বলেন, বিএনপি’র দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই দেশে ওয়ান-ইলেভেন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোট চোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। সরকারপ্রধান বলেন, ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না বলেই খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। জনগণই ভোটের মালিক। দেশের কামার, কুমার, তাঁতী, জেলেসহ সকল পেশার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সকলের জন্যই কাজ করবো, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্বের কাছে মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এগুলো তো আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। কই এর আগে তো বহু সরকার ছিল তারা তো করতে পারেনি? লুটপাট ও দুর্নীতি করেই খেয়েছে। তারা দেবে কোথা থেকে? আর আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে। আজকে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ।
বিশ্বব্যাপী গ্যাসের দাম বেড়েছে, কয়লার দাম বেড়েছে যার কারণে কিছুদিন আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমরা নিজেদের গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন করছি। গ্যাস ব্যবহার করছি। কাজেই আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, একই দিনে শত সেতু আর একই দিনে শত সড়ক উদ্বোধন এই রেকর্ড আর কেউ করতে পারে নাই। বাংলাদেশ করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল- এ সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে বলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে। দেশে দারিদ্র্যবিমোচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪১ শতাংশে ছিল, সেখান থেকে নামিয়ে ১৮ শতাংশে এনেছি। আগামীতে ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এক অর্থনীতিবিদের লেখার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোনো এক বিশেষ এনজিও’র ক্ষুদ্র ঋণে দেশে দারিদ্র্য কমেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯-এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই তো আজ আমরা দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোনো বিশেষ এনজিও’র ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র্য কমে তবে এই ১৮ শতাংশ আগে কেন হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বলে এনজিও’র ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য কমেছে তারা কোন অঙ্কে হিসাব করেন। দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী। তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেয়া, তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এ দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। কোনো এনজিও’র ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস পায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ সুদে যারা কাজ করবে তারা দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না বরং তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে ঋণের ওপরই জীবনযাপন করতে হয়। কখনো তাদের আত্মহত্যা করতে হয়েছে, কখনো জমি-জমা সব বেচতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ-সম্পদ কাজে লাগে না। করোনাকালীন সেটা প্রমাণিত। কারণ বহু সচ্ছল ব্যক্তি যারা একটু হাঁচি-কাশি দিলেও বিদেশে দৌড়াতো কিন্তু সে সময় তারাও যেতে পারে নাই। কোনো কাজেই লাগে নাই। কাজেই শুধু অর্থ সম্পদ দিয়েই জীবনে সবকিছু হয় না। মানুষের সেবা করে, তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন সেটাই হচ্ছে বড় পাওয়া। আর সেটাই আমাদের পেতে হবে। সভার শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সভাটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
ভয় পাবেন না, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এখন এক সংকট সংকুল দুর্গম পথের যাত্রী। আবারো ষড়যন্ত্র চলছে, সন্ত্রাস চলছে। আবারো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্মকালের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হুমকির মুখে। আবারো আমাদের পতাকা হুমকির মুখে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আস্থার ঠিকানা। আমরা তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, বিশ্ব সংকটের মধ্যেও একজন শেখ হাসিনা সবকিছু শক্ত হাতে মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিছু দুঃখ আছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। আমরা কষ্ট পাচ্ছি।
বড় বড় দেশগুলোর জন্য দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। তবুও সব সামলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মাথানত করতে জানেন না। উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভয় পাবেন না, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মিছিল-মিটিংয়ে কিছু লোক দেখলেই ভয় পায়। ওটা ষড়যন্ত্রকারীদের টাকার খেলা। আমাদের লোক অনেক বেশি। আগামী নির্বাচনে তাকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশের সর্বশেষ জনমত জরিপে এখনো ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে। ওবায়দুল কাদের বলেন, শপথ নিন, প্রস্তুত হোন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, অনেক রক্তঝরার বাংলাদেশ, এই দেশ, আমার পতাকা পাকিস্তানের বন্ধুদের হাতে আমরা তুলে দেবো না, দিতে পারি না। নেতাকর্মীদের শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুত হোন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, অনেক রক্তঝরার বাংলাদেশ, এই দেশ, আমার পতাকা পাকিস্তানের বন্ধুদের হাতে আমরা তুলে দেবো না। শেখ হাসিনা আমাদের আস্থার বিশ্বাসযোগ্য ঠিকানা। ভয় নেই, শেখ হাসিনা আছেন। আমরা তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো, আগামী নির্বাচনেও বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবো। যতকিছুই করুক, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বিজয়ের বন্দরে আমরা পৌঁছাবো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন আমরাই পারি। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। নিজ দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করে শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন, ইয়েস আমরাই পারি।