প্রবল বর্ষণ : উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া, নদী বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত – টানা তৃতীয় দিন পানির নিচে চট্টগ্রাম

প্রবল বর্ষণ : উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া, নদী বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত – টানা তৃতীয় দিন পানির নিচে চট্টগ্রাম

তিন দিন ধরে পানির নিচে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাচ্ছে নিম্নাঞ্চলসহ পুরো নগরবাসী। এদিকে টানা বৃষ্টিতে বরিশালের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদফতর বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার দুই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

চট্টগ্রাম : তিন দিন ধরে পানির নিচে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাচ্ছে নিম্নাঞ্চলসহ পুরো নগরবাসীকে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা। বাসাবন্দি হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত দুই দিনের মতো গতকালও বৃষ্টিতে ডুবেছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অলিগলি, নিচতলার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৭৭ মিলিমিটার। যা গত দুই দিনের তুলনায় কম। তবুও যেন ভোগান্তি কমেনি। জলাবদ্ধতা প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসী। নালা ও ড্রেনগুলো সিটি করপোরেশন নিয়মিত পরিষ্কার না করলে প্রকল্পের সুফল মিলবে না বলে জানান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল মো. শাহ আলী। গত দুই দিনের মতো শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। বেলা ১২টার দিকে ধীরে ধীরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এ সময় নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুড়তলা, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, কাতালগঞ্জ, সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ আবাসিক, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে বৃষ্টি থামার কিছুক্ষণের মধ্যে কিছু কিছু এলাকার পানি সরে গেলেও চকবাজার, বাদুড়তলা, বাকলিয়াসহ অনেক এলাকার পানি দীর্ঘক্ষণ ছিল। নালা ও ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় সড়ক ও অলিগলি থেকে পানি খালে যেতে সময় লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশাল : বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে টানা ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে জনসাধারণ। টানা বৃষ্টির কারণে বরিশালে জনমানুষ চলাচল কমে গেছে। অফিস আদালত-স্কুল-কলেজে উপস্থিতিও কম। এতে রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এই অবস্থা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহওয়া অফিস। গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে বরিশালে। শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে অবিরাম। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার এবং গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশালে। সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা। বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি। পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পায়রাসহ সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ভোলা : বৈরী আবহাওয়া ও উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় ভোলার মনপুরা-ঢাকা ও ভেলুমিয়া-ধুলিয়া রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে বিআইডব্লিটিএ ভোলার সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোলা থেকে সব কয়টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রাত ১০টার লঞ্চও ছেড়ে যাবে। দুপুরের পর ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসেনি। সোমবার সকালে ভোলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাবে না। কারণ সেই লঞ্চগুলো ঢাকার ঘাটে আটকে আছে। বাগেরহাট : ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে সুন্দরবন ও বাগেরহাটসহ উপকূলের বিভিন্ন মৎস্যবন্দরে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার। এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের মধ্যে উপজেলা সদরসহ উত্তর কদমতলা এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। সুন্দরবন বিভাগ ও বাগেরহাটের প্রধান মৎস্যবন্দর কেবি ফিশারি ঘাটসহ বিভিন্ন মৎস্যবন্দরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সাগরে টিকতে না পারায় কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার উপকূলের এসব স্থানে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। এদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে মোংলা বন্দর জেটিতে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও চ্যানেলে অবস্থানরত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের হারবার বিভাগ। এ সময় হয় জমি চাষ ও চারা রোপণ। দীর্ঘদিন পর এমন বৃষ্টি আমন চাষে উপকারে আসবে বলে জানান বৃষ্টি প্রত্যাশী আমন চাষিরা। মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, উপজেলায় চাষযোগ্য ৪ হাজার ২২৪ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে আমন চাষযোগ্য ২ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমির এক-তৃতীয়াংশ জমি সেচ সুবিধার বাইরে। ফলে এসব জমিতে এক-দুইবার চাষ দিয়ে রাখলেও পানির অভাবে এত দিন চারা রোপণ করা যায়নি। এ নিয়ে প্রান্তিক কৃষক অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তায় ছিল

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ