চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগে হতাশ পদোন্নতিপ্রত্যাশী অতিরিক্ত সচিবরা

চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগে হতাশ পদোন্নতিপ্রত্যাশী অতিরিক্ত সচিবরা

চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগে হতাশ হচ্ছেন- পদোন্নতিপ্রত্যাশী অতিরিক্ত সচিবরা। বর্তমানে অন্তত নয়জন কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিবের নিয়মিত পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। আর তাদের কারণে প্রশাসনের শীর্ষপদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে। কারণ, তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না পেলে সচিব হওয়ার যোগ্য সমানসংখ্যক নতুন কর্মকর্তা এ পদে উন্নীত হতেন।

কিন্তু ওই নয়জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে তারা বঞ্চিত। এর বাইরে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে সচিব ও সচিব মর্যাদায় চুক্তিতে আছেন অন্তত ১৫ কর্মকর্তা। বর্তমানে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে কর্মরত ৮৬ কর্মকর্তা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সচিবদের নিয়মিত পদে যে কয়েকজন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন, সেটা খুব বেশি নয়। তবে আইনসৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সাবেক সচিবদের মধ্যে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন, তাদের নিয়মিত প্রশাসনের সঙ্গে মেলাতে নারাজ প্রশাসনের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি থাকা না-থাকা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারি না। এদিকে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মরত সচিবদের মধ্যে আগস্টের পর থেকে চাকরির স্বাভাবিক বয়স শেষ হবে কয়েকজনের। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসানের ১৪ সেপ্টেম্বর, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম ২৬ সেপ্টেম্বর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ১৩ অক্টোবর, ভ”মি সং¯ড়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩১ অক্টোবর, অর্থ বিভাগের ফাতিমা ইয়াসমিন ১৮ নভেম্বর এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খানের ২৪ নভেম্বর অবসরে যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে।

অপরদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর অন্তত ২৩ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা। জুলাই মাসের মধ্যেই অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ১২ সচিবের। গেছেন আট সচিব, বাকি চারজন, অর্থাৎ অবসরগামী এক-তৃতীয়াংশ সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। চলতি মাস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১১ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে থেকেও কেউ কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।

উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের চেয়ে পদোন্নতির আধিক্য নিয়ে সরকারকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। তার পরও সচিব পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হচ্ছে। এতে হতাশায় ভুগছেন সচিব পদপ্রত্যাশী মেধাবী কর্মকর্তারা। সরকারি চাকরি থেকে ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যেতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা হলে ৬০ বছর চাকরির সুযোগ আছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই।
সম্প্রতি প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তিনি প্রশাসনের নবম ব্যাচের কর্মকর্তা। এ পদটি বেসামরিক প্রশাসনের “দ্বিতীয় শীর্ষপদ। গত এক দশকে এ পদে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ কর্মকর্তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। একই অবস্থা প্রশাসনের শীর্ষতম মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে। বর্তমানে এ পদে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেনের ৫৯ বছর পূর্ণ হবে আগামী ১৩ অক্টোবর।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিশেষ ব্যতিক্রম না হলে তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। এখানে অন্য হিসাব-নিকাশের কথাও বলছেন কেউ কেউ। উদাহরণ দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের আদর্শ পিরামিড কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে অষ্টম, নবম, দশম ব্যাচের কর্মকর্তারা শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কোনো কারণে মাহবুব হোসেন নিয়োগ না পেলে এ পদে আসার সম্ভাবনা আছে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর।

এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। এর বাইরে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রতিযোগিতা কমিশন, রাজউকসহ বেশ কয়েকটি অনিয়মিত পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করছেন ডজনের বেশি কর্মকর্তা। অন্যদিকে, প্রশাসনের ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তারা সর্বশেষ সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।

এরই মধ্যে এ ব্যাচের ১৫ কর্মকর্তা সচিব পদোন্নতি পেয়েছেন।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘দেশে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে উন্নয়ন কাজ চলমান। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা ব্যস্ত সময় পার করবেন। তখন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রয়োজন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব সময়ই ছিল, এখানে অন্য কিছু চিন্তার সুযোগ নেই। তবে এ ধরনের নিয়োগকে ‘অনৈতিক’ অভিহিত করেন সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান।

যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার, পরবর্তী ধাপে উপ-সচিব: এ ছাড়া উপ-সচিব পদে পদোন্নতি নিয়েও আলোচনা আছে। এই পদে পদোন্নতি হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।

গত ৩০ জুলাই সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে কিছুদিন আগে ডিসি নিয়োগের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যাদের (ডিসি পদ থেকে) তুলে আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জন বিসিএস ২২তম ব্যাচের (চাকরিতে যোগদান ২০০৩ সালে) কর্মকর্তা। আশা করা যাচ্ছে, তারা শিগগির যুগ্ম সচিব হয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভা শেষ হয়েছে। এ জন্যই তাদের উঠিয়ে আনা হয়েছে এবং তাদের জায়গায় নতুনদের পদায়ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ডিসির পদটি উপ-সচিব পদমর্যাদার।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ