রাজপথে নেতাকর্মীদের শক্ত উপস্থিতি চায় বিএনপি দায়িত্বে অবহেলা করায় ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে

রাজপথে নেতাকর্মীদের শক্ত উপস্থিতি চায় বিএনপি দায়িত্বে অবহেলা করায় ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে

রাজপথে নেতাকর্মীদের শক্ত উপস্থিতি চায় বিএনপি। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ‘অলআউট’ আন্দোলনে নামার যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংগঠনের কোনো স্তরে ‘গাফলতি’ দেখতে চায় না দলটি। দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, পদ-পদবি নিয়ে এখন ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে মাঠে থেকে কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে হবে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, অসুস্থতার কথা বলা হলেও দায়িত্বে অবহেলার কারণেই ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাকে দলের নিষ্ক্রীয় নেতাকর্মীদের জন্য ‘কঠোর বার্তা’ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ‘যথাযথভাবে’ সফল না হওয়ায় দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো মজবুত করার দিকে নজড় দিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়হীনতা থাকলে তা দ্রুত কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে দিকে এখন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

 

নেতারা বলছেন, বিএনপি এবার আন্দোলন সফল করতে বদ্ধপরিকর। এ কারণে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়- চলমান আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবে, আগামীতে তাদেরই দলে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যথায় বিবেচনার কোনো সুযোগ থাকবে না।
জানা গেছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে ঢাকায় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাইয়ে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির মূল্যায়ন, লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মহাসমাবেশ সফল হলেও কিছুটা সমন্বয়হীনতা ও নেতাকর্মীরা ব্যাপকহারে মাঠে না নামায় অবস্থান কর্মসূচি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে কর্মসূচি সফলে আরো বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংগঠনের সর্বস্তরে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গত মঙ্গলবার ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যদিও এ ক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণ দেখানো হয়েছে। ছাত্রদল সভাপতির ওই দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা এলাকায় থাকার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সেখানে যাননি। বিকেলের দিকে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল করেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এরই মধ্যে বিবিসি বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দলের নেতাদের কারো ‘সদিচ্ছার অভাব ছিল না, কিন্তু সমন্বয়হীনতার’ বিষয় ছিল। তিনি বলেন, ‘অনেকে হয়তো নানা বাস্তব কারণেই গত ২৯ জুলাই যথাসময়ে নির্ধারিত স্পটে আসতে পারেনি। কিন্তু একটি ঘটনার পর অন্য কেউ হাল ধরে বাকিদের সাথে সমন্বয় করতে পারেনি। গাবতলীর ঘটনাই দেখুন। আমান সাহেব আটক হওয়ার পর আর কেউ দায়িত্ব নিয়ে অন্যদের সাথে কমিউনিকেট করেনি।’
গয়েশ্বর রায় ওই দিন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশের হামলায় মারাত্মক আহত হন।

জনসভাগুলোতে বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলেও ‘বাধা আসতে পারে এমন কর্মসূচিতে নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের আনা যাচ্ছে না কেন- প্রশ্নের উত্তরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনসভাগুলো শান্তিপূর্ণ হয় বলে সেখানে সব বয়সের মানুষ উপস্থিত হতে পারে। কিন্তু যেসব কর্মসূচিতে ‘পুলিশ বা সরকারি দলের হামলার’ সম্ভাবনা থাকে সেখানে সেটা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘সবাইতো সব কর্মসূচিতে থাকতে পারবে না। তবে এখন যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে সেটার যৌক্তিক কারণও আছে। অনেকে মামলার কারণে আত্মগোপনে। ফোনে কথা বলাও রিস্ক হয়ে যায় অনেক সময়।’ তবে নেতাদের আশা বিষয়টি এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসায় এবং দল থেকে কড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত আসার কারণে তাদের সামনের কর্মসূচিগুলো আরো সুসংগঠিত হবে এবং তাতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণও বাড়বে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ