কাঁচাবাজারে অস্থিরতা থামছেই না

কাঁচাবাজারে অস্থিরতা থামছেই না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি লেগেই রয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কমলেও ডিমের দাম এখনো হাফ সেঞ্চুরির বেশি। অস্বস্তি বাড়িয়েছে সবজি ও মাছের বাজার। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে সবজি ও মাছের সরবরাহ কম হয়েছে। মাছের ফিডের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বেশি থাকার কথাও বলছেন কেউ কেউ।

রাজধানীর গেণ্ডারিয়া, নারিন্দা ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহেও ঝিঙ্গা ও ঢেঁড়শের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকারও নিচে বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে ৬০ টাকার কমে বাজারে কোনো সবজি মিলছে না। অন্যদিকে মাছের বাজারে কম দামি হিসেবে পরিচিত পাঙাশের কেজি এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। অন্যান্য মাছ মিলছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। রুই মাছের দামও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

 

বিক্রেতারা বলছেন, কদিনের টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্য সরবরাহ কম। তাতে সবজি ও মাছের দাম বেশ বেড়েছে।

 

এদিকে কাঁচামরিচের দাম ও আলুর দাম বেড়েছে। তবে চিনির সংকট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। অর্থাৎ মোটাদাগে বাজারে ক্রেতাদের জন্য কোনো সুখবর নেই।

সবজির বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ আলুর দাম ছিল ৪০ টাকা। বেগুনের দামও বেড়েছে। বড় আকারের কালো বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলার দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা কেজি। দরদাম করে নিলেও ৯০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ গ্রীষ্মের সবজি ঢেঁড়শ ও পটোলের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এমনকি ৩০ টাকার পেঁপের দাম এখন ৫০ টাকা হয়েছে।

অন্যদিকে বাজারে কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং টমেটো ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কথা হয় গেণ্ডারিয়ার ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী আবুল কাসেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কদিন টানা বৃষ্টির কারণে সবজি আসছে কম। তাতে দাম একটু বেড়েছে। এর মধ্যে সব সবজির দামই কিছু বেড়েছে। বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।’

এদিকে, ভারত থেকে আমদানি সত্ত্বেও দুই সপ্তাহ আগে বাজারে পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা।

তবে গত সপ্তাহের সবচেয়ে আলোচিত পণ্য ডিমের দাম ৫৫ টাকা হয়েছে, যা গত কদিন আগেও ৬০ টাকা ছিল। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির কেজি ৩৪০ টাকা।

বেড়েছে মাছের দামও। ক্রেতারা মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। চাষের মাছও এখন বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ২২০ টাকা, দেড় কেজির বেশি আকৃতিরগুলো ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও বড় মানের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০, কাতল প্রতি কেজি ৪৫০, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০-১০০০, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, এক কেজি ওজনের চাষের রুই-কাতলের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি। দেড় কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। প্রতি ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ২০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি সাইজের ইলিশ এক হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের মাছ বিক্রেতা কালাম বলেন, গত শুক্রবারের চেয়ে এখন প্রতিটি মাছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এতে আমাদের বেচাকেনা কমেছে। ক্রেতারা কম নিচ্ছেন। ভরা মৌসুমেও এবার বাজারে ইলিশের দাপট নেই। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য মাছের দামেও।

একই বাজারে মাছের দোকানি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাজারে সব মাছের দামই বেশি। মূলত মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছ এখন আর আগের মতো বেশি বিক্রি হয় না। কারণ এগুলোরও দাম বেড়েছে। সাধারণ ক্রেতারা ভালোমানের মাছ এখন আর তেমন কিনতে পারেন না। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

রাজধানীর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাসরিন বেগম বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। দাম যা-ই হোক, আমাদের তো খেতে হবে। গত দুবছর ধরেই দাম বেড়ে চলেছে। যে জিনিসের দাম একবার বাড়ে, ওটা আর কমে না। দাম কমানোর জন্য সরকারের কোনো মাথাব্যথাই নেই। আমরা সাধারণ মানুষরা সব সময়ই ভুক্তভোগী হয়েই আছি।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ