ছাত্রদলের ছয় নেতা ‘নিখোঁজ’ হওয়ার একদিন পর শনিবার রাতে তাদের অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদের আটকের কথা জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি।
তিনি জানান, রাজধানীর লালবাগে নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিকালে তিনটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৭ রাউন্ড গুলিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছয় নেতাকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে ছাত্রদল ও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) আজিমপুর থেকে নিখোঁজ হন ছাত্রদলের ছয় নেতা। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান, অমর একুশে হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল থেকে মমিনুল ইসলাম জিসানের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তার থাকার মতো সম্ভাব্য সব জায়গায় পরিবার ও সংগঠন খোঁজ নিলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে অন্য পাঁচ নেতা একত্রে আজিমপুরে জিসানকে খুঁজতে তার বাসায় গেলে ডিবি পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর ডিবি পুলিশ অস্বীকার করে আসছিল।
স্থানীয় থানা পুলিশ ও ডিবি’র কাছে দৌড়ঝাঁপ করে সন্ধান মিলেনি। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর ছাত্রদলের ৫ জন নেতা খোঁজ নিতে জিসানের আজিমপুরের বাসায় যান। কিন্তু খোঁজ নিতে গেলে তাদেরকেও সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে তাদের কারোরই সন্ধান মিলছিল না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
নিখোঁজের পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিরোধীদলীয় কোনো নেতাকর্মীকে বেআইনিভাবে আটকের পর অস্বীকার করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থেকে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা প্রতিদিন ঘটাচ্ছে। আটকের পর অস্বীকার করাটা আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল নিধনে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
রিজভী অবিলম্বে তাদেরকে প্রকাশ্যে উপস্থিত করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি নিশ্চিত যে, তাদেরকে সরকারের এজেন্সিগুলোই তুলে নিয়ে গেছে। তিনি ওই ছয় নেতাকে পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির পদযাত্রায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছয় নেতাকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দেয়ার আল্টিমেটাম দেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগ
গতকাল রাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক টুইট বার্তায় ছাত্রদলের ‘নিখোঁজ’ ছয়জন নেতার অবস্থান প্রকাশের আহ্বান জানায়। সংগঠনটি এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ৬ নেতাকে গতকাল রাতে তুলে নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এতে আরও বলা হয়েছে, আমরা পুলিশকে অবিলম্বে ওই ৬ ব্যক্তির অবস্থান প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি। কোন আইনের ভিত্তিতে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছে এবং আটকে রাখা হয়েছে তা স্পষ্ট করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি জানায়, অ্যামনেস্টি নিখোঁজ হওয়া ৬ জনের মধ্যে দুজনের পরিবারের সদস্য এবং তাদের আইনজীবীর সাথে কথা বলেছে। অ্যামনেস্টি জানতে পেরেছে, বেসামরিক পোশাক পরা একদল লোক নিজেদের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে গতকাল রাতে রাজধানী ঢাকার আজিমপুর এলাকা থেকে তুলে নিয়েছে। ‘নিখোঁজ’ ৬ ছাত্রদল নেতার আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা ডিবি অফিস থেকে তথ্য চাওয়া সত্ত্বেও তাদের বর্তমান অবস্থান অজানা রয়ে গেছে বলেও জানায় আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি।