বিচ্ছিন্ন তাপপ্রবাহের কবলে দেশ, আবারো বাড়বে বৃষ্টি

বিচ্ছিন্ন তাপপ্রবাহের কবলে দেশ, আবারো বাড়বে বৃষ্টি

বিচ্ছিন্ন তাপপ্রবাহের কবলে বাংলাদেশ। হঠাৎ করে দেশের কিছু স্থানে তাপমাত্রা হিটওয়েভের মতো ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই তাপপ্রবাহ নেমে যাচ্ছে। আবার শুরু হচ্ছে বৃষ্টিপাত। চলতি মাসে অনেক দিন একটানা বৃষ্টি ছিল।

 

গত শুক্রবার আবহাওয়া অফিস সন্ধ্যার ৬টায় তার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানায়, ১৮ আগস্ট রংপুর ও সিলেট বিভাগসহ পাবনা ও বগুড়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ১৯ আগস্ট সারাদিনই আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায়। কিন্তু পূর্বাভাস দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাপপ্রবাহ কমে গেছে এবং গত ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার পর আবহাওয়া অফিস তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস তুলে নেয়। এর পরিবর্তে দেশের সাত বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হওয়ারও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসেও এখন অবাক করার মতো অনেক কিছু থাকে। পূর্বাভাস দেয়ার ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম না হতেই তা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি এমন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে তাতে আবহাওয়ার অফিসের পূর্বাভাসেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সে কারণে ১৮ আগস্ট সকাল ৯টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। পরে একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অফিস বলেছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয়। আবার ১৯ আগস্ট সকাল ৯টা থেকেই বলছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়।

তাপপ্রবাহ না থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে; অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা মৌসুমি বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। এর ফলে বৃষ্টিপাতও কিছুটা কমেছে। গতকাল ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চাঁদপুরে মাত্র ২৪ মিলিমিটার। এই ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার। ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বদলগাছীতে সর্বোচ্চ ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, কারণ এখনো বর্ষাকালের পরিস্থিতি রয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে বর্তমান আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে এবং আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে বেশ ভালোভাবেই লেগেছে এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে যে আবহাওয়া বাংলাদেশে বিরাজ করছিল বর্তমানে তা থেকে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭০ দশকেও দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকালে বৃষ্টি শুরু হলে সারাদিন একটানা বৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী বলছেন, বর্তমানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এল নিনু পরিস্থিতি সক্রিয় রয়েছে। এটি এর ফলে শুধু বিভিন্ন এলাকায় নয়, ভারতীয় উপমহাদেশেও তাপমাত্রার নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। শিল্পযুগের পরবর্তী তাপমাত্রা তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা থেকে আরো বেশি তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী পানি নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলছেন, চলতি বছর বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়ছে। এটি একটি খারাপ ধরনের গ্রীষ্মের উদাহরণ। চলতি বছরের গ্রীষ্মের সাথে ১৯৮৩, ১৯৯৭ এবং কয়েক বছর আগের ২০১৫-১৬ সালের গ্রীষ্মের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। চলতি বছর গ্রীষ্মে ও বর্ষায় স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হতে পারে।

পরিবেশ শীর্ষ সংবাদ