নিজস্ব প্রতিবেদক
হঠাৎ করে আবারও আলোচনায় এসেছে সিঙ্গাপুর। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় চার নেতা এখন অবস্থান করছেন সেখানে। তাঁদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হচ্ছে। ঢাকায় কথা ছড়িয়ে পড়েছে, সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের প্রতিনিধি ও বিদেশি রাষ্ট্রের এজেন্টদের সঙ্গে সশরীরে বৈঠক করতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সেখানে গেছেন। সেখান থেকে তারেক রহমানের সঙ্গে চলছে দফায় দফায় যোগাযোগ এবং আলাপ-আলোচনা। দৃশ্যত বিএনপির এই চার নেতা চিকিৎসার কথা বলে সিঙ্গাপুর গেলেও এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কারণ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত দলটির সর্বোচ্চ ফোরামের চারজন নেতা একই সময়ে একই সঙ্গে একই দেশে অবস্থান করছেন। এটাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে ‘বিএনপির সিঙ্গাপুর মিশন’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার শেষ নেই। বিএনপিকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের নামে অপপ্রচার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচির ধরন ও দিনক্ষণ নিয়ে সিঙ্গাপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের শীর্ষস্থানীয় এই নেতারা (ভার্চুয়ালি) বৈঠক করছেন। সেখানে তাঁরা খোলা মনে মতবিনিময় করছেন। বিশেষ করে ঢাকা থেকে টেলিফোন কিংবা যে কোনো মাধ্যমে লন্ডনে কথা বললে- সেটি সরকারের আড়িপাতার যন্ত্রের আওতায় চলে আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার বৈঠকের কথাবার্তা যেন কিছুতেই বাইরে প্রকাশ না হয়, সে বিষয়টিও বিএনপির এই মিশনের একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ দেশে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। এ কারণে দলটির নেতারা চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সাজাতে সিঙ্গাপুরকেই বেছে নিয়েছেন। একই সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও লন্ডন থেকে তারেক রহমানের বার্তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ এটাকে বিএনপির ‘সিঙ্গাপুর ষড়যন্ত্র মিশন’ হিসেবে উল্লেখ করলেও রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এটিকে বিএনপির ‘সিঙ্গাপুর মিশন’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপি নেতারা কি আদৌ চিকিৎসা নিতে গেলেন? নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন- এটি অনেকেরই প্রশ্ন।
সিঙ্গাপুর ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বলেছেন, আজকে বিএনপি নেতারা দলবেঁধে গেছেন সিঙ্গাপুরে, আবার শুনেছি জাতীয় পার্টির এক গ্রুপও গেছে। ভালো, আলাপ-আলোচনা করুক। রাজনৈতিক আলোচনা দেশে হোক, বিদেশে হোক করবে- এটা তাদের অধিকার। তবে দয়া করে ষড়যন্ত্র করবেন না।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বেশি থাকায় আগেভাগেই সিনিয়র নেতারা তাদের শারীরিক চেকআপের কাজটা সেরে নিতেই সিঙ্গাপুর গেছেন। তাঁদের প্রত্যেকে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট হসপিটালের ডাক্তারদের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টও করে গেছেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসাও শুরু করেছেন।
তার মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত ২৭ জুন থেকেই সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর ২৪ আগস্ট সিঙ্গাপুরের একই হাসপাতালে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই দিন পর ২৬ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও সিঙ্গাপুরে যান। আর দলের আরেক শীর্ষ নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রথমে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান। পরে লন্ডন ঘুরে এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। আন্দোলনের মাঝপথে দলের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার একদিনের ব্যবধানে সিঙ্গাপুর যাত্রা এবং আরও দুই নেতার সেখানে আগে থেকেই অবস্থান ঘোর রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও সিঙ্গাপুরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতাদের বৈঠক হতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে।