বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত-চীন তুমুল প্রতিযোগিতা

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত-চীন তুমুল প্রতিযোগিতা

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশে ভারত ও চীনের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। তবে এক্ষেত্রে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে আছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব কিভাবে ভারত মোকাবিলা করছে তা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ায়। এতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের যে প্রতিযোগিতা চলছে তার তুলনা করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক ও প্রফেসর ডেরেক গ্রোসম্যানের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে থিংক ট্যাংক র‌্যান্ড করপোরেশনের ওয়েবসাইটে। তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন। এতে বাংলাদেশ অংশে ডেরেক গ্রোসম্যান বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) সামরিক সমর্থন দিয়েছিল ভারত। এজন্য তারা ঋণী। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। তা সত্ত্বেও কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চীন।

 

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। তখন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চুক্তি স্বাক্ষর হয় প্রায় ২৪০০ কোটি ডলারের। তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দেয়া সবচেয়ে বড় বিদেশি ঋণদাতা হয়ে ওঠে চীন। অন্যদিকে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে বেইজিং এবং নয়া দিল্লি উভয়েই। চট্টগ্রাম এবং ঢাকার মধ্যে ট্রানজিট সময় কমিয়ে আনার জন্য গত বছর পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে চীন। উপরন্তু উভয় দেশই বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা বন্দর উন্নয়নে লেগে আছে। বিআরআইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সড়ক, রেল অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। র‌্যান্ড করপোরেশন বলেছে, এখন এখানে শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন।
সব প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে ভারত। মে মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কিছু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এই দুই প্রতিবেশী যে অর্জন করেছে, তা অন্য যেকোনো অর্জনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তিনি আরও বলেছেন, চীন হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বন্ধু, বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। অন্যদিকে ঐতিহাসিক কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভিন্ন এক পর্যায়ের। জি২০ সামিটে আগামী মাসে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তাদের সঙ্গে নয়া দিল্লির ঐতিহ্যগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ফলে এসব সেন্টিমেন্টের বিষয় সন্দেহাতীত। এক্ষেত্রে চীনের ভুলগুলোও ভূমিকা রেখেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ২০১৬ সালে শি জিনপিং যখন ঢাকা সফর করেন তখন বিআরআইভুক্ত প্রকল্পগুলো স্থবির হয়ে ছিল। তবে অগ্রগতিমূলক কতগুলো উদাহরণের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু একটি।

উপরন্তু অন্যান্য ইস্যুতে দৃশ্যত হতাশ ঢাকা। এর মধ্যে আছে বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি বিপুল। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চাপ দিতে চীনের কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা। জানুয়ারিতে ঢাকা সফর করেন চীনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গাং। ওই সময় তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। র‌্যান্ড করপোরেশন বলছে, তাতে দৃশ্যত অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। সৌজন্যে  টাইমস অব ইন্ডিয়া

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ