ঢাকা মহানগরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর জরিমানা করার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, যারাই অনিয়ম করবে, আইন ভাঙবে তাদের উপর জরিমানা আরোপ করতে হবে। তাহলে আইন লঙ্ঘনকারীরা সোজা হয়ে যাবেন। যেমনটা বিদেশে হয়। সেখানে কেউ আইন ভঙ্গ করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। যার কারণে সবাই আইন মেনে চলেন।
ঢাকার ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য রক্ষা সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের সড়কে চলাচলের সময় সবাই আইন মেনে চলে। যখনই বাইরে আসে তখনই কেউ নিয়ম মেনে চলে না। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই সড়কে গাড়িগুলো চলছে। এটার একটা বিহিত করা দরকার। আমাদের ঢাকার অনেক রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল বাতি অচল। আবার যেগুলোতে সচল আছে সেখানে লাল বাতি জ্বেলে উঠার পরেও গাড়ি নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় চালকরা। কিন্তু বিদেশে দেখুন কিভাবে চালকরা ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলে। কারণ তারা জানেন সিগন্যাল অমান্য করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। জরিমানা না দিলে সড়কে গাড়ি বের করা যাবে না।
‘এইচআরপিবি বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য’ মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ছিলো। এই মামলায় ফ্লাইওভারের পিলারে পোস্টার লাগানো বন্ধসহ সৌন্দর্য রক্ষায় নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু এই নির্দেশনার পরও পোস্টার লাগানো বন্ধ করা যায়নি।
এই মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানির জন্য ওকালতনামা দেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। এইচআরপিবির পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
শুনানির শুরুতে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, আমাদের নির্দেশ ছিলো ফ্লাইওভারে পোস্টার সাটানোকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের। পাশাপাশি ওইসব পোস্টার সরানোরও নির্দেশনা দেওয়া ছিলো। কিন্তু আদেশের কার্যকারিতা কোথায়?
এ পর্যায়ে মেজবাহুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় মগবাজার ফ্লাইওভার পড়েছে। এটা আমরা দেখভাল করি। ইতিমধ্যে ফ্লাইওভারের লাইটিং ব্যবস্থা সচলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, শুধু পদক্ষেপ নিলে হবে, দেখভাল করতেও হবে। আর মেয়রের পক্ষে তো মাঠে গিয়ে সবকিছু মনিটর করা সম্ভব নয়। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, আমি তো মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। যাতায়াতের সময় দেখতে পাই বিভিন্নস্থানে ময়লা জমে করে রাখা হয়েছে। এগুলো যাদের পরিষ্কার করার দায়িত্ব তারা করছেন না। এদেরকে যারা মনিটর করবে তারাও নজরদারি করছেন না। যদি মাঠকর্মীদের উপর নজরদারি থাকত তাহলে এই শহরে ময়লা পড়ে থাকত না।
মনজিল মোরসেদ বলেন, পোস্টার লাগানোর অপরাধে জরিমানা করা উচিত। প্রতি পোস্টারের জন্য ১০ টাকা করে জরিমানা করলে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ হয়ে যেত।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এগুলো বন্ধে আইন অনুসরণ করতে হবে। আর কিছুর দরকার নাই। যারাই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের জরিমানার আওতায় আনুন দেখবেন সবকিছু নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনানুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি সবার সহযোগিতা লাগবে। যারা অবৈধ দখলদার তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। যদি দেখভালের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সরকারি সম্পদ বিনষ্ট হবে। এ সময় তিনি বলেন, অনেক সময় দেখি হেটে হেটে ফ্লাইওভার পার হচ্ছেন অনেকে। যে গতিতে গাড়ি ছোটে সেখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই হেটে ফ্লাইওভার পারাপার বন্ধ করতে হবে। মেজবাহুর রহমান বলেন, সব কিছু নিয়মের মধ্যে আনতে সময় লাগবে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অসহনীয় যানজট। কিভাবে এই শহরে বাঁচব। সময় লাগবে বলে যদি বসে থাকেন তাহলে কোনদিনই এসব সমস্যার সমাধান হবে না। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী কোথায়। তাদের কি এসব বিষয়ে মাথাব্যথা নাই।
মেজবাহুর রহমান বলেন, মাথাব্যথা থাকা দরকার। বিচারপতি বলেন, আইনজীবী যদি না থাকে তাহলে তো আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করা দরকার। এরপরই হাইকোর্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করে দেন।