চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরের সেরোটাইপ ডেন-২-তে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্ত। এ বছর ডেন-২ ও ৩ দুটি সেরোটাইপে একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগীও পাওয়া গেছে। তবে এ বছর ডেন-১ ও ডেন-৪ সেরোটাইপে আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বর্তমানে রোগীরা ডেঙ্গুর কোন সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে, তা জানতে গত এক মাসে ২০০ নমুনা পরীক্ষা করেছে ভাইরোলজি বিভাগ। ২০০ নমুনার মাঝে ১৫১টিতে সেরোটাইপ ২, ৩৭টিতে সেরোটাইপ-৩ এবং ১২টিতে সেরোটাইপ-২ ও ৩ দুটি সেরোটাইপের একত্র উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম বলেন, ‘ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্তদের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেন-৩-তে আক্রান্তদের ডেঙ্গু হেমোরেজিকের ঝুঁকি থাকে। আমরা ডেঙ্গুর সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু করছি। এটা থেকে বোঝা যাবে ডেঙ্গু পজিটিভ হলেও কেন রোগীর এনএস১ নেগেটিভ আসে। এ ছাড়া দেশে ডেন-৫ সেরোটাইপ আছে কি না আমরা তা-ও জানতে পারব।’ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বেশি মৃত্যু হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের অর্থ হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্লাড প্রেশার অতিদ্রুত কমে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব হয় না, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ শকে থাকলে বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হতে থাকে। এ কারণেই এখন ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বেশি রোগী।’ তাই কেউ জ্বরে ভুগলে তাদের শকে যাওয়া ঠেকাতে বাড়িতে বেশি করে তরল জাতীয় খাবার, পানি, জুস দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রোগী যে সেরোটাইপে আক্রান্ত হোক না কেন ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা একই। ডেঙ্গু হলে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রোগী তরল খাবার বেশি খাবেন। তবে বমি হলে, প্রেশার কমে গেলে, কোনো রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে যেতে হবে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা কোনো জটিলতায় ভোগা রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে হাসপাতালে যাবেন।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যে জানা যায়, গত বছর ৯০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ডেন-৩-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন আর ১০ শতাংশ ডেন-৪-এ। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মারা যান ১৭৯ জন। ওই বছরে ৯০ শতাংশ লোক ডেন-৩ আক্রান্ত হয়েছিলেন। দেশে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেন-১ ও ডেন-২-এ আক্রান্ত বেশি ছিল। সাত বছর পর এবার আবার ডেন-২ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ বছর আক্রান্ত ও মৃতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু। এর মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার। ডেঙ্গুজ্বরে মৃতের সংখ্যা ৫৬০ ছাড়িয়েছে। ঢাকা ছাড়িয়ে দেশের ৬৪ জেলায় মিলছে ডেঙ্গু রোগী। ঢাকায় স্থিতিশীল থাকলেও অন্যান্য বিভাগ ও জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।