আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। অশিক্ষিত ও মূর্খদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের কোনো অগ্রগতি হয় না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত উন্নয়ন করেছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি শহীদের খাতায় চোখ বোলাই তাহলে দেখব ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিটি অর্জন আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস- এই কথা বলে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমরা যে বিদেশে ছিলাম দেশে আসতে পারিনি, তখন আমাদের ফিরে আসার দাবিটা প্রথমে ছাত্রলীগ করে। এভাবে বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল আর আমি ছাত্রলীগের হাতে কলম ও বই তুলে দিয়েছি। তাদেরকে বলেছি তোমরা পড়াশোনা করো।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য উর্দু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রথমে আঘাত আসলো আমাদের ভাষার ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এটার প্রতিবাদ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার মা সবসময় আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন। প্রেরণা যুগিয়েছেন, শক্তি যুগিয়েছেন। সংসার কাজের জন্য কখনো বিরক্ত করেননি। জাতির পিতা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেটা আমার মা খুব ভালোভাবে জানতেন। তাই প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করে গেছেন। তিনি খুব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে। সে কারণে আমার বাবার পাশে তিনি সব কিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ’৭৫ সালে মৃত্যুকালে তিনি তার সাথী হলেন। জীবন ভিক্ষা চাননি, খুনিদের প্রতিবাদ করেছিলেন। তাকেও ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করে।
ছাত্রলীগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এগিয়ে আসে। ওয়ান-ইলেভেন, কোভিড-১৯-এ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ছাত্রলীগ মানুষের ধান কেটে দেয়। তাই ছাত্রলীগের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস, অনেক আস্থা। তারুণ্যের শক্তি একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমিও একসময় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। আমার কেবিনেটে এখনো যারা আছে তারা সবাই ছাত্রলীগ করে আসা। আমরা যে প্রত্যেকটা কাজে দেশের অগ্রণী ভূমিকা করতে পেরেছি সেটাতে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। একটি আদর্শ নিয়ে এই সংগঠন তৈরি হয়, সেই সংগঠনই পারে একটি দেশে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এক/এগারোতে ছাত্রলীগ আপস করেনি। সে সময় আমাদের ছাত্ররাই প্রথমে মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ করেছে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ছাত্র সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছাত্রসমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
এর আগে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন গেটের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মিছিল-স্লোগানে টিএসসি গেইট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট, বাংলা একাডেমির সামনের গেইটসহ পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে।