ফখরুল রিজভীসহ ৬৮ নেতার বিচার শুরু ২০১২ ও ২০১৫ সালের দুটি নাশকতার মামলা

ফখরুল রিজভীসহ ৬৮ নেতার বিচার শুরু ২০১২ ও ২০১৫ সালের দুটি নাশকতার মামলা

পুরোনো দুটি নাশকতার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, রিজভী আহমেদ, শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন ঢাকার দুটি আদালত। ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর পল্টন থানায় নাশকতার মামলায় ফখরুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। অন্যদিকে, রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে ২০১৫ সালে করা অপর এক মামলায় শিমুল, শামা ওবায়েদসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ দুটি মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

সরকারের নির্দেশেই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলার চার্জ গঠনের অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুলদের আইনজীবীরা। মামলাকে ভুয়া ও গায়েবি উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্দেশদাতা হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মির্জা ফখরুলদের মামলায় গতকাল রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। ফখরুলসহ মামলার অপর আসামিরা হলেন– বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, জামায়াতের দক্ষিণ সিটির সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবু, কাজী রেজাউল হক বাবু ও ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম।

এদিন জামিনে থাকা মির্জা ফখরুল, রিজভী আহমেদসহ আটজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হয়। জামিনে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলামসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। আদালত ২০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগে মামলার অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।

আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। পরে মাসুদ আহমেদ তালুকদার  বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা সিটি করপোরেশনের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন– এটি কোনো মানুষ বিশ্বাস করবে না। ওই রকম গাড়ি সিটি করপোরেশনের নেই। শুধু মামলাই ভুয়া নয়, মামলার আলামতও ভুয়া। মামলার বাদী ড্রাইভার মামলায় উল্লেখ করেছেন, হেলাপারকে মারধর করা হয়েছে; কিন্তু তাঁর নাম এজাহারে নেই। মামলা দায়ের করার তিন বছর পর জনৈক তাজুল নামে এক ব্যক্তিকে হেলপার বানানো হয়েছে। সেই তাজুলের কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল না। অর্থাৎ মামলাটি সত্য হিসেবে গ্রহণ করার কোনো প্রমাণ নেই।

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী আরও বলেন, আসামিরা বলছেন, সেখানে বোমা ফাটানোর কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার প্রমাণ না থাকার কারণে এ মামলায় ককটেলের ধারা বাদ দেওয়া হলো। অথচ ১৪ জন সাক্ষীর সবাই বলল, ককটেল ফাটানো হয়েছে। তার মানে পুরো মামলাই অবিশ্বাস্য। মামলার এজাহার বিশ্বাসযোগ্য নয়, সাক্ষীদের বক্তব্যও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তাহলে বোঝা যায়, সরকারের নির্দেশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আর এই সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য উত্তম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে আদালতকে ব্যবহার করছে। যেহেতু এটি একটি ভুয়া ও গায়েবি মামলা, সে কারণেই এই চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করব।

এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন জানান। পরে তিনি  বলেন, উনারা (ফখরুলের আইনজীবী) রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তাদের নির্দেশেই সিটি করপোরেশনের গাড়ি ভাঙচুর করেছে– সেটি দৃশ্যমান। পুলিশ সব আলামত জব্দ করেছে। জব্দ তালিকায় এগুলো আছে। তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বেআইনিভাবে পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেন। তারা যে কথা বলছেন, সেটা সঠিক নয়। তারা নির্দেশ না দিলে এই গাড়ি ভাঙচুর হয় না। এ ঘটনায় তারা কিছুতেই দোষ এড়াতে পারেন না।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের চালক মো. আয়নাল প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইস্কাটনের মিন্টো রোড থেকে ময়লা নিয়ে গাড়ি চালিয়ে মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে যাচ্ছিলেন। কাকরাইল থেকে বিজয়নগরের দিকে এলে মির্জা ফখরুল ইসলাম ও রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির ২০০-২৫০ জন কর্মী গাড়ি থামিয়ে হেলপারকে মারধর, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়িও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ফখরুল, রিজভীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচালক মো. আয়নাল। মতিঝিল জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর মির্জা ফখরুল, রিজভীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। চার্জশিট দাখিলের পর আসামি শফিউল বারী বাবু মারা যাওয়ায় তাঁকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

শিমুল বিশ্বাস-শামা ওবায়েদসহ ৬০ জনের বিচার শুরু

এদিকে, আট বছর আগে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে ২০১৫ সালে দায়ের করা এক মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক গতকাল রোববার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এদিন শিমুল বিশ্বাস আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আদালত মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী শিশির হাওলাদার বিষয়টি জানিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। এরপর তদন্ত শেষে ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

শিমুল বিশ্বাসের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, এটি একটি মিথ্যা মামলা। আট বছর আগে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে নাশকতার অভিযোগ পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছিল। এ মামলায় শিমুল বিশ্বাস মূল আসামিও নন। তিনি নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। শিমুল বিশ্বাস বর্তমানে অসুস্থ। এ কারণে তাঁর পক্ষ থেকে সময় প্রার্থনার আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ না করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, চার্জ গঠনের বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ