বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মহোদয় একজন অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। সবচেয়ে কম সময় কর্মস্থলে এসে চালান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। একজন মহাগুণী মানুষ না হলে সরকার তাঁকে এই জায়গায় ধরে রাখত না। তিনিই পৃথিবীর দীর্ঘতম রেকর্ডকৃত বাজেট বক্তৃতার প্রবর্তক।
তাজউদ্দীন আহমদ খোদ অর্থশাস্ত্রের মানুষ ছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে অর্থমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। দিনরাত গণমানুষের স্বার্থে খেটে মরতেন স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম এই নায়ক। প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু তাঁকেও বসিয়ে দিয়েছিলেন। সে তুলনায় আমাদের অর্থমন্ত্রী যেন এক অবিকল্প ব্যক্তিত্ব।
অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে মন্দগতির পরও সরকার তাঁকে বহাল তবিয়তে রেখেছে। এর থেকে ভালো অর্থপ্রতিভা সরকার নিশ্চয়ই আর খুঁজে পাচ্ছে না।
অর্থনীতি বোঝেন না
ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে এক মায়ের চাওয়া ছিল, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ আমরা যারা অর্থনীতির পেশার সঙ্গে জড়িত, তারাও চিন্তা করি, মানুষ কীভাবে দুধে-ভাতে থাকবে। অর্থমন্ত্রী আমাদের এই পেশার জন্য এক হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন। গত ৩১ আগস্ট তিনি এমন কিছু অমৃতসম বাণী বর্ষণ করেছেন, যা যুগপৎ বিস্ময়ের ও উদ্বেগের। তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা বলেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তাঁরা অর্থনীতিই বোঝেন না।’
অর্থমন্ত্রীর এহেন ঢালাও মন্তব্য ভয়ংকর ও দুর্বিনীত। নিজে একজন হিসাববিদ হয়ে, অর্থনীতির কোনো ‘একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড’ না থাকা সত্ত্বেও, অর্থনীতির সবকিছু আমাদের মন্ত্রী বুঝে গেছেন। অর্থনীতির উচ্চশিক্ষা নিয়ে যাঁরা স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ, তাঁরা যদি রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিশ্লেষণ বা মতামত প্রকাশ করেন—তা পছন্দ না হলেই এসব মানুষ অর্থনীতিই বোঝেন না।
অর্থমন্ত্রীর এহেন মূল্যায়ন প্রবাসে আমাদের নিয়োগকর্তাদের হাতে পড়লে আমরা যারা অর্থনীতির পেশায় ডালভাত খাই এবং দেশের অর্থনীতি নিয়ে কিঞ্চিৎ কথা বলি বা লেখালেখি করি, তাদের চাকরি থাকবে না।বিস্তারিত