‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো’ নব্বইয়ের দশকে অঞ্জন দত্তের এ গানে চাকরি পেতে কাঠখড় পোড়ানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। দশকের পর দশক পার হয়ে গেলেও এ গানের উপযোগিতা শেষ হয়নি। বরং বহুগুণে বেড়েছে।
বর্তমানে প্রায় সব সরকারি চাকরি হয় টাকার বিনিময়ে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামান্য অংশ বাদ দিলে টাকা ছাড়া চাকরি জোটে না। দপ্তরি বা অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেতেও লাগে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। কর্মকর্তা পর্যায়ের চাকরির দর ওঠে ২২ বা ২৫ লাখে। সরকার বছরে গড়ে ৫০ হাজার চাকরি দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেন, কোন চাকরিতে কত টাকা ঘুষ লাগে তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। সব চাকরিতে ঘুষ লাগছে বিষয়টি এমনও নয়। তবে ঘুষের যে ব্যাপকতা তাতে ধরেই নেওয়া যায় পিএসসির বাইরের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ চাকরিতেই ঘুষ লাগে।
স্থান-কাল ভেদে ঘুষের রেট ভিন্ন ভিন্ন হয়। জেলা পর্যায়ে অফিস সহায়কের চাকরি পেতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কিন্তু সচিবালয়ের ভেতর কোনো মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়কের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকাও দিতে হয়। পুলিশ, ট্যাক্স, কাস্টমসÑ এসব সেক্টরের চাকরির ঘুষের রেটের কোনো সীমা থাকে না। এসব বিষয় উল্লেখ করে একজন বিশ্লেষক জানান, ধরে নেওয়া হয় সরকারি চাকরি পেতে গড়ে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ৫০ হাজার চাকরির মধ্যে পিএসসির আনুমানিক ২ হাজার বাদ দিলে থাকে ৪৮ হাজার। এর ৭৫ শতাংশ চাকরির সংখ্যা হচ্ছে ৩৬ হাজার। প্রতিটি চাকরির জন্য গড়ে ১৫ লাখ টাকা হারে ঘুষ দিতে হলে ৩৬ হাজার চাকরির জন্য ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়।
ছা-পোষা সংসার থেকে চাকরির ঘুষের টাকা জোগান দেওয়া আকাশ-কুসুম চিন্তার মতো। কোনোরকমে লেখাপড়া টেনে নিতে পারলেও চাকরির টাকার জোগান দিতে পারে না নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার। ফলে যাদের টাকা আছে তারাই চাকরি পাচ্ছে। আর যাদের টাকা নেই, সেসব পরিবারের সন্তানরা চাকরির বাজারে অচ্ছুতই থেকে যাচ্ছে। এতে তেলে মাথায় তেল দেওয়া হচ্ছে, সমাজে নতুন করে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।বিস্তারিত