মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের খাগদাহ গ্রামের আতাহার খানের ছেলে রবিন খান (২২)। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে এক বছর আগে পাড়ি জমান ইউরোপের দেশ ইতালির উদ্দেশে। এরপর দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন লিবিয়ার দালালদের কাছে। কয়েক দফায় মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাকে। পরে সহায়সম্পদ বিক্রি করে তার পরিবার ১৭ লাখ টাকা দেয় দালালদের। চলতি বছরের ২২ আগস্ট থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। মা-বাবাও জানেন না রবিন বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের নয়ারচর গ্রামের আমজাদ বেপারীর ছেলে আজীম বেপারীর (২২) সঙ্গে তিন মাস আগে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এর আগে আমির নামে এক দালাল কয়েক দফায় ১৮ লাখ টাকা নেন ইতালি পাঠানোর নামে। আজীমের বাবা আমজাদ বেপারী বলেন, ‘ভিটামাটি বিক্রি করে ছেলের জন্য ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আমরা নিঃস্ব। ছেলে কোথায় তাও জানি না।’ একই এলাকার ইউনুস মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। এরপর তার ঠাঁই হয় লিবিয়ার বন্দিশালায়। সেখানে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। দালাল চক্র কয়েক দফায় আদায় করে ২২ লাখ টাকা। পরে দালালদের টাকা দিয়ে চলে আসেন দেশে। নির্যাতনের শিকার রানা জানান, দালালরা হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। নির্যাতনের সময় কান্নার রেকর্ড শুনিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা হয় টাকা। মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের তরিকুল ও রুবেল নিখোঁজ রয়েছেন চার বছর ধরে। পরিবারের সঙ্গে নেই কোনো যোগাযোগ। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তা-ও জানেন না পরিবারের সদস্যরা। শুধু রবিন, আজীম, রানা নন; এমন শত শত যুবক ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তাদের কেউ কেউ আবার লাশ হয়ে ফিরে আসেন। আবার কারও কারও সন্ধান পাওয়া যায় না বছরের পর বছর। তবে এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা হয় না। দু-একটি মামলা হলেও দালালরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে নিখোঁজ ও নিহতের পরও অবৈধভাবে ইউরোপযাত্রা থামছেই না। মাদারীপুরের বহু যুবককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।বিস্তারিত