নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যবসা সহজীকরণে পিছিয়ে থাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, তথ্যের ঘাটতি, দক্ষ শ্রমিকের অভাবে বিদেশিরা এ দেশে মূলধনি বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। কারণ, বিদেশিরা এ দেশে নতুন বিনিয়োগে তেমন আস্থা পাচ্ছেন না। বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে হলে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বক্তারা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে এফডিআইয়ের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব মতামত প্রকাশ করেন।
সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমেছে। অন্যদিকে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।
অথচ দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেশি দরকার। কেন এমনটা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
সম্প্রতি জাপানের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থা জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাপানি কম্পানিগুলোর ওপর করা একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক এবং তাঁরা এ দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী।
কিন্তু জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ জাপানি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের বিষয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে অপর প্যানেল আলোচক জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব নাহিদ রশিদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ। তবে অনেক উদ্যোগ সত্ত্বেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত এফডিআই আসছে না।
’ এর পেছনে ব্যবসা সহজীকরণে পিছিয়ে থাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি, কাঠামোগত দুর্বলতা, ছোট বাজার, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ইত্যাদি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘প্রযুক্তিগত জ্ঞান, দক্ষতা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ মডেল অনুসরণ করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়বে।’
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে বিডার পরিচালক মো. আরিফুল হক জানান, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সার্বিক বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও মূলধনি বিনিয়োগ কমেছে। এই চিত্র রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও ইপিজেড বহির্ভূত উভয় ক্ষেত্রে দেখা গেছে। বেশির ভাগ বিদেশি বিনিয়োগই হয়েছে পুনর্বিনিয়োগ আকারে। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবির।