দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে বিরোধী শিবির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের।
অন্য দিকে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। নিজেদের দাবির পক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি ও তার আন্দোলন সঙ্গীরা। বিরোধীদের ওই কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশ ডেকে রাজপথেই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এরই মধ্যে বিরোধীদের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে কঠোর বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তারা মনে করছে, সম্প্রতি দলীয় সভাপতির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে। বিরোধীদের আন্দোলনের মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনর চাপও নেই সরকারের ওপর। ফলে ক্ষমতাসীনরা চায়, যথাসময়ে নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়কের দাবি যদি সরকার মেনে না নেয় তাহলে বিএনপি হয়তো নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারই লাভবান হবে। বিএনপি হয়তো নির্বাচন প্রতিরোধের চেষ্টা করতে পারে। ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়েও সচেতন। তারা এখনই বিরোধীদের সতর্ক করতে চায়, তারা যেন নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা না করে।
গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। ওইদিন রাজধানীতের তারুণ্যের সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। মহাসমাবেশ থেকে ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগও। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অনুমতি না পাওয়ায়’ পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপির ডাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আগস্টজুড়ে শোকের কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি আগস্টে কর্মসূচি দিলেও তেমন একটা সাড়া পায়নি বলে মত আওয়ামী লীগ নেতাদের। এরই মধ্যে গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বড় জমায়েত করে ক্ষমতাসীন দল। যদিও ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শান্তি সমাবেশ থেকে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি রূপ নিয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে বড় বড় শোডাউন দিয়ে জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখানোই তাদের কর্মসূচির বড় উদ্দেশ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে স্বল্প সময়ে জমায়েত করার জন্য।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজধানীর জমায়েত থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। মাসের শুরুতে শোডাউনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচকদের কাছে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন তুলে ধরা হয়েছে। বিরোধীদের নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। ওয়ার্ম আপ হিসেবে গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে জনসমর্থন ও দ্বিতীয়টা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষের উপস্থিতির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। সবাইকে বার্তা দেয়া হয়েছে, দেশের সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সক্ষমতাও দেখানো হয়েছে বলে দলটির নেতাদের মতো।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, এই দুই সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের প্রধান বার্তা যে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলাম। সেই প্রচারণার যে শোডাউন সেটা সারাদেশ, জাতি এবং বিদেশে যারা আমাদের সমালোচনা করে তাদেরও দেখালাম যে, এই জনসমর্থন আমাদের আছে, আমাদের জনগণের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, বিএনপির জন্য বার্তা যে নির্বাচনে আসো, নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রচেষ্টা করো না। নির্বাচনে এসে নিজেদের জনসমর্থন প্রমাণ কর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, চলতি মাসের শুরুতে আমরা যে শোডাউন দিয়েছি তাতে বিএনপির আন্দোলনে মনোবলে ধাক্কা লেগেছে। এই ধাক্কা এক মাসেই কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। এই মাসে খুচরা কর্মসূচি দিয়ে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করবে তারা। অক্টোবরের দিকে টানা কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। তাদের কর্মসূচির ধরন দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফেরার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশ সফর করবেন। ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেল পথের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন সাভারে সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সাভারেও ঢাকার সমাবেশের মতো বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যেই ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এই দিনটি পালন করবে আওয়ামী লীগ।