এডিসি হারুনে তোলপাড় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মম নির্যাতন, করা হলো বদলি

এডিসি হারুনে তোলপাড় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মম নির্যাতন, করা হলো বদলি

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘এডিসি হারুন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণ করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ দেবেন। অন্যথায় ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্তি (স্ট্যান্ড রিলিজ) হিসেবে গণ্য হবেন।’ এ প্রজ্ঞাপনের কয়েক ঘণ্টা আগে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে (পিওএম) উত্তর বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এদিকে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপির উপকমিশনার (অপারেশনস) মো. আবু ইউসুফকে। আর সদস্য করা হয়েছে ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. শাহেন শাহ ও ডিবি মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রফিকুল ইসলামকে। তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে ডিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। পরে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রাতে শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে ঘটনা মীমাংসা করেন। আহতরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। আহতদের সহপাঠী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুন শনিবার রাতে ৩৩ ব্যাচের আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী আজিজুল হক খান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন বিসিএস কর্মকর্তা। এ সময় তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে এডিসি হারুন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে বেদম মারধর করেন। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও এডিসি হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পেটান। পরে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল রাজধানীর আফতাবনগরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর) ও ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) এবং পাসপোর্ট বাতায়নের (কল সেন্টার) উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় এডিসি হারুন অবশ্যই অন্যায়ের শাস্তি পাবেন। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত অপর এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি তদন্ত করা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এডিসি হারুনের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। শনিবার তাদের একসঙ্গে দেখায় এ ঘটনার সৃষ্টি হয়। ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা এডিসি হারুন বিভিন্ন সময়ে অতি উৎসাহী হয়ে সহকর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে মারধর করে সমালোচিত হয়েছেন। এদিকে পুলিশের মারধরে ছাত্রলীগ নেতা নাইমের সামনের একাধিক দাঁত পড়ে গেছে। ছাত্রলীগ নেতা মুনিম প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও নাইমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। ঘটনায় আহত দুই ছাত্রলীগ নেতা ও ৩৩ ব্যাচের নারী পুলিশ কর্মকর্তার স্বামী আজিজুল হক খান একই এলাকার।

 

এডিসি হারুন-অর-রশীদ

এডিসি হারুনের শাস্তি দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের : দুই শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং নির্যাতনকারী পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুনের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা বিভিন্ন দাবি সংবলিত ফেস্টুন বহন করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, এডিসি হারুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানুষকে রক্ষার জন্য। কিন্তু তারা মানুষকে রক্ষা না করে তাদেরই নির্যাতন করছে। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয়। তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। কারণ তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এর আগেও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করার আদেশ দিয়েছিলেন এডিসি হারুন। আইনজীবীদেরও হেনস্থা করেছিলেন। এমন বিকৃতমস্তিষ্কের পুলিশ কর্মকর্তার জন্য পুলিশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

গ্রেফতার চান ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা : এডিসি হারুনের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি জানান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাঈম বলেন, বারডেম হাসপাতালের চার তলায় আজিজুল হক খান ও এডিসি হারুনের মধ্যে কথাকাটি হয়। একপর্যায়ে হারুন পুলিশ ডেকে আজিজুল হক খান ও শরীফ আহমেদ মুনীমকে থানায় ধরে নিয়ে যান। তখন আমিও তাদের পেছন পেছন থানায় যাই। তাদের কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা জানতে আমি থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু থানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসির রুমে আমাকে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য বেধড়ক মারধর করে। এডিসি হারুন নিজে আমাকে মেরেছেন। রিভলবার দিয়ে আমার ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছিল, আমি মারা যাব।
ছাত্রদলের উদ্বেগ : পুলিশ কর্তৃক ছাত্রলীগের দুই নেতা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদলের ঢাবির সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান। তারা বলেন, ছাত্রলীগের মদদে ছাত্রদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কলঙ্কজনক সংস্কৃতির শিকার এখন খোদ ছাত্রলীগের নেতারাই হচ্ছেন। বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর অমানবিক পুলিশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোয় বুনো উল্লাস করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বাহিনী যখন ভোট ডাকাতির দায়িত্ব নিয়েছে, তখন রাজনীতি ছেড়ে ছাত্রলীগের নেতারা টেন্ডারবাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস এবং চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত হয়েছে। আজ তাদের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও ছাত্রলীগের কেউ কোনো প্রতিবাদ জানাতে সক্ষম হয়নি। বিবৃতিতে দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনসহ অতীতের সব পুলিশি নির্যাতনের দায়ে এডিসি হারুনকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান ছাত্রদল নেতারা।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ