সেলফি বাঁধিয়ে গলায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান

সেলফি বাঁধিয়ে গলায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেলফির প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব না কি বলেছেন, ফখরুল এখন কি বলবেন? আমি বলি, আমার পরামর্শটা নিবেন? এই সেলফিটা বাঁধিয়ে গলার মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সেটা আপনাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করবে।

গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি’র সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করুন, আমেরিকা এবং বাইডেন এখন আমার সঙ্গে আছেন। অথচ এই আপনার প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগেই বললেন, আমেরিকা এখন বলছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নাকি তাকে দিয়ে দেয়ার জন্য। যেহেতু সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিচ্ছেন না সেকারণে আমেরিকা নাকি তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। সংবাদ সম্মেলনে উনি নিজে বলেছেন। তাহলে এখন কী আমরা বুঝবো আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী আরেকটা কথা বলেছেন, এই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকা প্রভুত্ব করতে চায়। দেশগুলো দখল এবং আক্রমণ করবে। এটা আমেরিকা। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ নয়।

তার যে চিন্তা-ভাবনা, বৈশ্বিক কৌশল, সব কিছুই তারা তাদের মতো করে। তাতে করে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়নি, ভিসা নীতির পরিবর্তন হয়নি। তার জন্য নতুন গণতান্ত্রিক সম্মেলন ডেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সুতরাং ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। কথাগুলো আপনারা বলেন, কিন্তু ভেবেচিন্তে বলেন না। এত দেউলিয়া এবং নিঃস্ব হয়ে গেছেন যে, বাইরের দেশে একটা সেলফি তুলে এখন আপনি ঢোল পেটাচ্ছেন যে, হা হা আমরা জিতে গেছি। জেতাবে তো বাংলাদেশের মানুষ। ভোটের মাধ্যমে। সেই ভোটটা ঠিক করার ব্যবস্থাটা করেন। তা না হলে কোনো বাইডেনই আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। সেলফি রক্ষা করতে পারবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতে গিয়ে যে সমস্ত কথা-বার্তা বলছেন, বাইডেনের যত ছবি দেখাতে চান- যদি জনগণ ভোট দিতে না পারে তাহলে তারা কখনো আপনাদের ক্ষমা করবে না। পরিষ্কার কথা বাইডেন বা আমেরিকা তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। তারা খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। তারা বলেছেন, সকল দলের অংশগ্রহণে এখানে আমরা একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চাই। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এটা শুধু আমেরিকা না সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের আইজিপি সাহেব বলেছেন, গায়েবি মামলা কি উনি জানেন না। জানার কথা না তো। কারণ মামলাগুলো উনি দেন তো। উনার পুলিশ দেন।
সাইফুর রহমানের প্রতি স্মৃতিচারণ করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমি সাইফুর রহমানকে দেখি, গেম চেঞ্জার হিসেবে। এজন্য যে, বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের পূর্বে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা ছিল- এই অবস্থাটা ছিল, একটা আবদ্ধ অর্থনীতি। সেই সমকালীন সরকারের যে ভ্রান্ত অর্থনীতি ধারণা ছিল, তার মধ্যে থেকে যখন দেশ বেরিয়ে আসলো, যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কাঠামো তৈরি করলেন তখন অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুক্তির বাতাস বয়ে দিলেন। তখন সাইফুর রহমানকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমান একটা বদ্ধ অর্থনীতি থেকে মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে আসার জন্য যে ভিত্তিটা রচনা করা দরকার, যে সংস্কার করা দরকার- সেই কাজটা নিয়ে সুচারুভাবে সম্পূর্ণ করেছেন। আর তিনি আপাদমস্তক সৎ, অসাধারণ মেধাবী মানুষ ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে এম সাইফুর রহমানের ছেলে ও স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেন, উনি (সাইফুর রহমান) ১৫-১৬ বছর মন্ত্রিত্ব করেছেন এবং ৩০ বছর ধরে বিএনপিতে রাজনীতি করেছেন। আমি খুব কাছ থেকে সব কিছু দেখেছি। উনার যে দেশপ্রেম এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থন দেখার মতো ছিল। আর উনি তিনটা সরকারের সময় সংসদে ১২টা বাজেট পেশ করেছেন। উনি যেভাবে বাজেট প্রণয়ন করতেন এখন তো সেটার কিছু নাই। এখন তো অর্থমন্ত্রীকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশ কীভাবে চলছে আমরা তো বুঝতে পারছি না। কারণ তিন বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর কোনো খোঁজ নাই।
সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিলেট বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ