আ. লীগের অধীনে নির্বাচন, শিয়ালের কাছে মুরগি দেওয়ার সমান : ফখরুল

আ. লীগের অধীনে নির্বাচন, শিয়ালের কাছে মুরগি দেওয়ার সমান : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, এক দফা দাবি। সেটা হলো, আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দাও আর হাসিনা তুমি পদত্যাগ করো। কারণ তুমি সরকারে থাকলে কোনো দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সংসদ বিলুপ্ত করো, আর নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করো।

তারা (আওয়ামী লীগ) বলে কি, তারা থাকলেই নাকি ভালো নির্বাচন হয়। শিয়ালের কাছে মুরগি দিলে কী হয় জানেন না? উনিই হবেন আবার! আমরা তা হতে দেব না। আমাদের কথা পরিষ্কার, এখন এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি।

সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। আসুন এখন আমরা সবাই জাগ্রত-ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ, দানবীয় মনস্টার যে সরকার আজকে জোর করে আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা মানুষের সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি, দেশনেত্রীকে মুক্ত করি।’
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এক দফা তারুণ্যের রোডমার্চ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত এই রোডমার্চের আয়োজন করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারা পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করে এ দেশে দুইটা নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে যদি দেশের জনগণ ঠিকমতো ভোট দিতে না পারে তবে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন তারা কী করতেছে, বিরোধী দল যেন নির্বাচনে না আসতে পারে সেই জন্য মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার সেই আগের মতো শুরু করে দিয়েছে। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করায় তাকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে।

তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করছে না, ডাক্তাররা বলছে তাকে বাঁচাতে হলে তার লিবার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার; সেটা বিদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বারবার বলা হয়েছে, পরিবার থেকে বলেছে, আমরা বলেছি; কিন্তু তিনি শুনতে রাজি নন। সাঈদী সাহেবকে যেভাবে জেলে ঢুকিয়ে হাসপাতালে মেরে ফেলেছে না? আজকে দেশনেত্রীর ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য ওইটাই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন; তা না হলে সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া বাজারে উদ্বোধনী পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভোট চোরেরা আবার ভোট চুরিতে নেমেছে। তাদের আর ভোট চুরি করতে দেওয়া যাবে না। তাদের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। এই ভোট চোরদের মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা। এই ভোট চোরদের মধ্যে আছে তোষামোদী দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা। এই ভোট চোরদের মধ্যে আছে তাদের দলীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন। এই ভোট চোরদের মধ্যে আছে লুটেরা ব্যবসায়ীরা। এই ভোট চোরদের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এই ভোট চোরদের মধ্যে আছে বিচার বিভাগের একটি অংশ। এদের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের ওপর চোখ রাখুন, এদের তালিকা করুন। প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় এদের তালিকা করবেন। এই ভোট চোরদের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা শুধু আমেরিকার ভিসা থেকে বাতিল হবে না; তারা বাংলাদেশের মানুষের ভিসা থেকে বাতিল হবে। তাদের পরিবারের কারা কারা বিদেশে বসবাস করে তাদের তালিকা করবেন। তাদের সম্পত্তির তালিকা করেন, তাদের কাছে অস্ত্র কয়টা আছে তার তালিকা করেন। এইগুলো আমরা জাতির সামনে তুলে ধরব আগামী দিনে। যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে সেদিনই এই আন্দোলনের সমাপ্তি হবে, তার আগে সমাপ্তি ঘটবে না। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’

যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই রোডমার্চে বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মোটরসাইকেল, ট্রাক, কার ও বাসযোগে যাত্রা শুরু করেন। বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে রাজশাহী গিয়ে রোডমার্চ সমাপ্ত হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ