সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুই সমাবেশ দিয়ে তা শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ৩ অক্টোবর রোডমার্চ দিয়ে।
বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার এক দিন পর মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দল প্রায় একই রকম কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি বলছে, এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নতুন নয়। গেল কয়েক মাস ধরেই আওয়ামী লীগ তা করে আসছে। এর ফলে কোনো সহিংসতা হলে তার শতভাগ দায় সরকারের।
বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও একই কর্মসূচি পালনের কথা বলছে। এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, এনডিএম ও লেবার পার্টি যুগপৎ আন্দোলনে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে। এ পর্যন্ত যুগপৎভাবে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, পদযাত্রা প্রভৃতি কর্মসূচি দেয়। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ, ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।
মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ করেছে। আর বিএনপি কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গীতে একই সময়ে দুটি সমাবেশ করেছে। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, এ কারণে আজ এখানে সমাবেশ। আমরা ঢাকা শহরসহ সারা দেশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করব, এ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। সেই দিনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন।
সূত্র বলছে, বিএনপির আগামীর কর্মসূচিগুলোতে সর্বোচ্চ সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। মামলার হাজিরা কিংবা অসুস্থতা ছাড়া কেউ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। ওয়ার্ড থেকে থানা পর্যায়ের সব নেতাকে রাজপথে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গাফিলতি থাকলে হারাতে হবে দলীয় পদ। হাইকমান্ড দায়িত্বশীল নেতাদের কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নেতারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মসূচি সফল করতে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তা মোকাবিলার নির্দেশনাও আছে। তবে আগ বাড়িয়ে সংঘাতে না জড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, পুলিশ বাহিনী সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ আঘাত করলে আমরা কি চুপ থাকব? আঘাত এলে নিশ্চয়ই হাতে চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকব না। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা বরাবরের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাব। সরকারের ফাঁদে পা দেব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির একজন নেতা বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর নয়। এখন আঘাতের বদলে পাল্টা আঘাত করা হবে। আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই সব শক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সময়ের আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কেউ তাদের কর্মসূচি পালন করবে। আমরা শান্তিপূর্ণই থাকতে চাই। তারপরও গায়ে পড়ে সংঘাত করলে এর দায় পুরোটাই সরকাকে নিতে হবে। তারা তাদের কর্মসূচি করবে; আমরা আমাদের। আওয়ামী লীগ তো মাত্র পাঁচদিনের কর্মসূচি দিল। আমরা দিয়েছি ১৫ দিনের। জনগণের জোয়ারে তাদের প্রতিহত করা হবে। তবে আমরা চাই তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমাদের দেখানো কর্মসূচি থেকে সরে আসুক।
বিএনপির পিছু হটার সুযোগ নেই জানিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, সংঘাত করতে চাই না। তবে হামলা হলে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দেওয়া হবে। আশা করি, সরকারি দল কোনো উসকানি দেবে না। পাল্টাপাল্টি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, একই দিনে একই রকম কর্মসূচি দেওয়া ক্ষমতাসীন দলের নতুন কিছু নয়। তারা সব সময় কর্মসূচিতে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা ফাঁদে পা দেব না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।