মামলার জালে বন্দি হয়ে পড়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের সক্রিয় কোনো নেতাই মামলা থেকে রেহাই পাননি।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। এতে আসামি প্রায় ৪০ লাখ। বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
এরসঙ্গে সচল হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেন ও পরবর্তী সময়ে সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির পুরোনো মামলা। শুরু হয়েছে বিচারকাজও।
এসব মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে দ্রুত রায় দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির নেতা ও আইনজীবীদের।
বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলার বিচারের গতি বেড়ে যাওয়ায় কারাগারের থাকা নেতাদের অনেককেও প্রায় প্রতিদিন আদালতে হাজির করা হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও মহাসচিব থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই মামলার আসামি। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগেই সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা ৯৮টি। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার এক অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘আমার নামে ৯৮টি মামলা। আর দুটি হলে সেঞ্চুরি হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৪৫০। তার বিরুদ্ধে একেক দিন শুনানি থাকে চার থেকে পাঁচটি মামলার।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসের মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় খন্দকার মোশাররফের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ হয়েছে। সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে যাবে। মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বিচারাধীন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বাস পোড়ানোর একটি মামলায় সম্প্রতি অভিযোগ গঠন হয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিচার চলছে।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা শেষ পর্যায়ে আছে। ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আটজন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের ২৫টি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুতগতিতে চলছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই তাকে আদালতে হাজির হতে হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে মামলা ৮০টি, এর মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে ১০টি মামলা। একই কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা ১২৭টি।
বিএনপির নেতাদের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা দুই শতাধিক মামলার তালিকা তৈরি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিয়মিত সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিরোধী দলকে দমনে সরকার আদালতকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। সরকার আদালতে প্রভাব বিস্তার করে সিনিয়র নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করতে চাচ্ছে। একইসঙ্গে বিএনপির মাঠপর্যায় এবং সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মীদের শাস্তি দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করার কৌশল নিয়েছে। মূলত বিএনপিকে চাপে রাখতে সরকার এসব করছে।