তলাবিহীন ঝুডি থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

তলাবিহীন ঝুডি থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

এম এ বাবর:
বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে এক সময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার। সেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পন করেছে। এ পরিবর্তনে সময় লেগেছে মাত্র ৫২ বছর। উন্নয়নের অভিযাত্রায় গত দেড় দশক পেরিয়ে শুরু হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ননীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) ২০২১ সালের ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর ফলে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষিত হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ, যেখানে রয়েছে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয়। আর স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে ৩টি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৩টি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও ৩টি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সেই সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গঠিত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। এরপর থেকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। ক্ষমতায় এসেই কয়েকটি বড় প্রকল্পের (মেগা প্রকল্প) কাজ শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে এগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। সরকারের এই মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে-পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে ও এই সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি ছিল বড় অর্জন।

শিক্ষাখাতে অর্জন :

শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো-শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য :

শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি (১) কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি (২) উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

নারীর ক্ষমতায়নে অর্জন :

নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক দূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ এর ওপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন :

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে।

কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন :

কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বার বার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং।

বিদ্যুৎখাতে সাফল্য :

বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লাখ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অর্জন :

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ওষুধ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যশিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্জন :

হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি (১) টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতাভুক্ত হয়েছে।

 

ভূমিব্যবস্থাপনায় অর্জন :

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১২ এর খসড়া’।

 

পদ্মা সেতু প্রকল্প :

পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন। নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে।

 

পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প :

সম্প্রতি দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুর ভেতর দিয়ে রেল চলাচল পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ট্রেন চলাচল করবে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র :

দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটি। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুরু থেকে প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এটি হবে দেশের ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

মেট্রোরেল প্রকল্প :

সম্প্রতি চালু হয়েছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বা মেট্রোরেল-৬-প্রকল্পের একাংশ। ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত পরীক্ষামূলক যাত্রার মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল উদ্বোধনের কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয় যা ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর ৭৬ শতাংশ অর্থায়ন করছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র :

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ। ১২শ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৭৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৪ সালে পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারবে মাতারবাড়ি প্রকল্প। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। আমদানি করা কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশীপ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

 

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ :

প্রকল্পটি বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি যুক্ত করা হয়। এর আওতায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালীর আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প যুক্ত রয়েছে।

 

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে :

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হলো গত ২ সেপ্টেম্বর। দ্রুতগতির এই উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট, যা যানজটের কারণে এখন প্রায় ১ ঘণ্টার মতো লাগে। বিদেশি বিনিয়োগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় পরিবহন খাতে এটাই প্রথম প্রকল্প।

 

এমআরটি লাইন-৫:

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৫ (নর্দান রুট) প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এমআরটি লাইন-৫ এর রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো : হেমায়েতপুর-বলিয়ারপুর-বিলামালিয়া-আমিন বাজার ও গাবতলী। সেখান থেকে দারুস সালাম-মিরপুর ১- মিরপুর ১০-মিরপুর ১৪ ও কচুক্ষেত হয়ে যাবে বনানী। এরপর গুলশান ২ ও নতুনবাজার হয়ে লাইনটি যাবে ভাটারায়। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে আমিন বাজার ও ভাটারা এই অংশে মেট্রোরেলের উড়াল পথ হবে। গাবতলী থেকে নতুনবাজার অংশে হবে পাতাল মেট্রোরেল।

এমআরটি লাইন-৫ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পাতাল মেট্রোরেল। এ প্রকল্পে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাতাল এবং ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার উড়াল (মোট ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ) মেট্রোরেল লাইন তৈরি হবে। এর মাঝে যাত্রী উঠা নামায় মোট ১৪টি স্টেশন (৯টি পাতাল ও ৫টি উড়াল) থাকবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ