দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দিয়ে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির আলটিমেটাম আমলেই নিচ্ছে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে কিছু করার নেই জানিয়ে ক্ষমতাসীন দল উল্টো অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপিকে ৩৬ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া। বর্তমানে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনেই চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এরপরও খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি সরকার অনুমতি দেয় তাহলে একটি নয় একশ’টি আবেদন দিতেও তাদের আপত্তি নেই।
অন্যদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে তার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। এমনি প্রেক্ষাপটে রোববার এক সমাবেশ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তি দিয়ে দ্রæত বিদেশে পাঠনোর আলটিমেটাম দেন। পরদিন সোমবার সকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক দোয়া মাহফিল থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানার আলটিমেটামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এই আলটিমেটাম নিয়ে সোমবার সরগরম ছিল রাজনৈতিক মহল।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দÐ শর্তযুক্তভাবে স্থগিত করা হয়। পরিবর্তন করতে হলে খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করে সহাবস্থান আনতে হবে। এরপর অন্য বিবেচনা করা যাবে। তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আইনমন্ত্রী বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হয়। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটি।
এই ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। আমি পরিষ্কার করেছি, যদি কোনো আবেদন আসে সে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। এটি আইন। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে আইন মোতাবেক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কী দেখলেন আপনারা?’
এদিকে সোমবার বিকালে এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৩৬ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় কোন মুখে? তারা তো ৩৬ মিনিটের একটি আন্দোলনও করতে পারেনি। বিএনপির কোমর, হাঁটু সব ভেঙে গেছে। বিএনপিকে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে এর মধ্যে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য পরিহার করার আহŸান জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাহ্যিকভাবে বিএনপির আলটিমেটাম ক্ষমতাসীনরা আমলে না নিলেও ভেতরে ভেতরে গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে কোনোভাবেই মাঠ ফাঁকা রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ। এজন্য বিএনপির যে কোনো ঘোষণা বাস্তবায়নে বাধা দিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও হার্ডলাইনে থাকবে। দেশের কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দ
মন করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আলোচনা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক। এটিকে আরও ফলপ্রসূ করার কৌশল হিসেবেই ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচির ভাবনা নেই দলটিতে। এ ইস্যুতে রাতে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা আলোচনা করেছেন। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেলে কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি।
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর সরকার দাবি না মানলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ আলটিমেটাম খুবই বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের সাড়া পাওয়া না গেলে দলের মহাসচিব পরবর্তী কর্মসূচি দেবেন।
প্রসঙ্গত, ৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার, ফুসফুস, কিডনি জটিলতাসহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিক প্রভৃতি রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিসকদের সমন্বয় গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার দÐ স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগের মতো খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এ সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না- এ দুটি শর্তে অষ্টমবারের মতো দÐ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।