বিএনপি তাদের চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠাতে আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন করছে। ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ বিকালে। দলটি মনে করছে, সরকার স্বাভাবিক আন্দোলনে সাড়া দেবে না। এ বাস্তবতা মেনে আন্দোলনের গতি বাড়াতে হবে। ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের মতো জোরালো কর্মসূচি দেওয়ার সময় এসেছে। সেই সঙ্গে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক যে চাপ আছে তা আরও বাড়াতে চায় বিএনপি।
সূত্র বলছে, দেড় মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরা জরুরি লিভার প্রতিস্থাপনের তাগাদা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বিএনপিপ্রধানের অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তিনি ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। দুর্বল হয়ে পড়ছেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, সিচুয়েশন নিয়ে বলা যাবে না। তবে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। স্বাস্থ্যের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেগুলোর রেজাল্ট দেখে নতুন চিকিৎসা চলছে। এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীসহ তৃণমূল থেকেও জোরালো কর্মসূচি দিতে চাপ আছে। এসব নিয়ে সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার আমিন বাজারে সমাবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সময়ের আলোকে বলেন, নরম কথা আর সরল কর্মসূচি দিয়ে কাজ হবে না। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছলচাতুরী করে সরকারের লাভ হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আল্টিমেটাম কর্মসূচি কী হবে; তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঠিক করা হবে। সরকার তো কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করছে না, এটা আমরাও দেখছি। আমরাও চাইব আমাদের নেত্রীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। সেই অনুযায়ীই সরকারকে বাধ্য করার মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সময়ের আলোকে বলেন, আল্টিমেটামের পর অবশ্যই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। নীতিনির্ধারণী ফোরামে সরকারের মনোভাব ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুয়ায়ী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। ইতিমধ্যে আমাদের কর্মসূচি চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একজন সিনিয়র নেতা বলেন, এক আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার চাপেই সরকার খেই হারিয়ে ফেলেছে। এ চাপকে আরও ঘনীভূত করতে হবে। কেননা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। তার বিষয়ে বিদেশিরাও খোঁজখবর রাখছেন। এখন শুধু রাজপথে জোরালো আন্দোলন করতে হবে। সমাবেশ কিংবা রোডমার্চের মতো ভদ্রসভ্য কর্মসূচি দিয়ে দিনশেষে লাভ হবে না। নানা ছুঁতোয় সরকার নেত্রীকে বিদেশ যেতে দেবে না।
রোববার নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। তার এক দিন পর সোমবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা সময় চলে গেছে, আর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে যেন দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। এ অবস্থায় দেশনেত্রীর যদি কিছু হয়ে যায় তা হলে আওয়ামী লীগের কারও কোনো অস্তিত্ব বাংলাদেশে আমরা রাখব না।
নয়াপল্টনের সমাবেশে কথা হয় মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ইস্যুর আন্দোলনকে সরকার পতনের চূড়ান্ত ধাপে নিয়ে যেতে চান তারা। সরকারের ওপর এমনিতেই আমেরিকার ভিসানীতির খড়গ ঝুলছে। এ চাপকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ এখন সরকার ও পুলিশ প্রশাসন একাকার হয়ে মাঠে নেমেছে। তাই জোরালো টানা আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। তারা রাজপথে আছেন। এখন শুধু আন্দোলনের ডাকের অপেক্ষায়।
ঢাকার দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম মনে করেন, দীর্ঘদিন পর আল্টিমেটাম দেওয়ায় নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা হয়েছেন। তারা আল্টিমেটামের পর আরও কঠিন কর্মসূচি দেখতে চান। আল্টিমেটামও সরকারকে চাপে রাখার বার্তা। মুখের কথা, মানবিক দিক কোনোটাতেই কাজ হচ্ছে না। এ জন্য হার্ডলাইনে যেতেই হবে। তবে আল্টিমেটামের সময় পার হওয়ার পর বিএনপি পরে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সোমবার রাজধানীর ধোলাইখালের সমাবেশে দলের মহাসচিব সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার আবেদন করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো ওই চিঠির শেষাংশে বলা হয়, ‘বেগম জিয়ার জীবন রক্ষার্থে ও তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে “অ্যাডভান্স মেডিকেল সেন্টারে” চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এমতাবস্থায় সব শর্ত শিথিলপূর্বক তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি এবং বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’ এরপর নতুন করে কোনো আবেদন করেনি বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবার। জবাবে সরকার বলছে, খালেদা জিয়ার বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। আইনের বাইরে তাদের কিছুই করার নেই।