৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহিংসতা উসকে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘মানবতাহীন, আক্রমণাত্মক ও সন্ত্রাসীদের মতো’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীতে মিলাদ মাহফিলের এ কথা বলেন তিনি। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অসুস্থ নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের কথা নাৎসিদের মতো। তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের প্রতিহত করবে। বিরোধী দলের কি সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই? ওবায়দুল কাদের ৩৬ দিনের কথা বলছেন, এটা শেষ হলে কী করবেন? ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেবেন? তারা বিএনপির সভা-সমাবেশে লাঠি, দা ও ছুরি নিয়ে আক্রমণ করবে?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনি (ওবায়দুল কাদের) ৩৬ দিন পরে আপনাদের সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেবেন। পিঠ জনগণের দেয়ালে ঠেঁকে যাচ্ছে। পিঠ দেয়ালে ঠেঁকে যাওয়া জনগণ কিন্তু, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার কে যুবলীগ, কে ছাত্রলীগ, কে কত অস্ত্র নিয়ে এলো ওটা আর দেখবে না। জনগণের উত্তাল যে ঢেউ, এই ঢেউয়ের কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র, কোনো অস্ত্র টিকতে পারে না। এই ঢেউয়ের মধ্যে প্লাবিত হয়ে যাবে আপনার যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আপনাদের তৈরি করা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেকবার পার পেয়ে গেছেন। এবার আর পার পাবেন না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘এখনও সময় আছে আপনারা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিন, পদত্যাগ করুন, এই তিন মাস নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করুন। না হলে অনেকবার পার পেয়ে গেছেন। হত্যা করে, ক্রসফায়ার করে, গুম করে পার পেয়েছেন। এবার কিন্তু আর পার পাবেন না, এবার পার পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কে ওবায়দুল কাদের, কে আনিসুল হক (আইনমন্ত্রী), কে হাছান মাহমুদ (তথ্যমন্ত্রী) এটা কিন্তু জনগণ আর দেখবে না। পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি ছাত্র নেতা ছিলেন, আপনি রাজনীতিবিদ একটি দলের। কিন্তু আপনি তো আপনার সন্ত্রাসীদের নেতা। আপনার বক্তব্য থেকে বেরিয়ে আসে তাই বিএনপি সঠিক পথে না এলে ৩৬ দিন পরে দেখে নেবেন। যুবলীগ, ছাত্রলীগকে নামাবেন। সঠিক পথ কোনটা? আপনাদের পথ। আমরা তো জানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের আঘাত করা, তাদের কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাত্রলীগকে হত্যা করা, বুয়েটে মেধাবী ছাত্র আবরারকে হত্যা করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের ওপর উপর্যুপরি আঘাত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ একে অপরকে হত্যা করা। এগুলো তো আপনাদের সঠিক পথ। আমরা এই সঠিক পথ তো চিনি না। আমরা চিনি কীভাবে গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করতে হয়, কীভাবে সংবাদপত্রের নিশ্চিত করতে হয়, আমরা জানি মানুষের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয়। সেগুলো জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।’
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় বিএনপির উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এই মিলাদ মাহফিল হয়। মিলাদ মাহফিলে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল খালেক, আবদুল বারী ড্যানি, উলামা দলের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য সচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
‘কীভাবে মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হয় তা আইনমন্ত্রী জানেন’
একই দিন সকালে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি দেশে এখন বাকশালি আইন চলছে, নৌকা মার্কা আইন চলছে, বর্তমান আইনের সঙ্গে প্রচলিত আইনের, ন্যায়বিচারের আইনের কোনো মিল নেই।’
আইনমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘তাকে শেখ হাসিনা পছন্দ করেছেন কারণ এই লোকটা সুচারুভাবে কীভাবে মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হয় সেটা খুব ভালো করে জানেন।’
সকালে সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল শুক্রবার নারী সমাবেশে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘এ দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত নারীরা। স্বামীকে আটক করলে নারীদের ছেলেমেয়েদের সবকিছুর ব্যবস্থা করতে হয়। বাজারে নারীদের যেতে হয়। আজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদিজাকে এই সরকার বিনা বিচারে আটকে রেখেছেন। আসুন, সবাই এই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি। এসময় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন মনিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিকেলে কারাবন্দী যুবদল নেতা গোলাম মাওলা শাহিনের মুক্তির দাবিতে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে মিছিল হয়।