দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সামপ্রতিক সময়ে তার অসুস্থতা আরও বেড়েছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা। তবে সরকার বলছে, আইনের বাইরে তাদের কিছু করার নেই। এ অবস্থায় গত রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। সেই আল্টিমেটামের ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়েছে গতকাল। এদিকে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির আন্দোলনে জোয়ার এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, কারও ভিসানীতির তোয়াক্কা আওয়ামী লীগ করে না। যদিও কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুখে এমন কথা বললেও বাস্তবে তাদের মনোবল ভেঙে গেছে। আর এসব বিষয় মিলিয়ে আবার মুখামুখি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। ফলে স্বভাবতবই বড় ধরনের কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাই নাশকতার শঙ্কাকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে টহল, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গতকাল ও গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাবের টহল দল চোখে পড়ে। এ ছাড়াও দেখা যায়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বসানো হয়েছে র্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট। সন্দেহজনক কোনো কিছু নজর এলেই চেক করছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। ডিএমপি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক কোনো বিষয়কে সামনে এনে কেউ যদি দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এমনকি পুলিশ বাহিনীকে উসকে দিয়ে কেউ যেন ফায়দা নিতে না পারে, সে বিষয়েও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ডিএমপির সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসিদের এ বিষয়ে তদারকি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক রিলেশন্স ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না দেয়া সরকারের সিদ্ধান্ত। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সামনে এনে কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে তাকে শক্ত হাতে দমন করা হবে। যেকোনো নাশকতা মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় প্রস্তুত। রাজধানীর নিরাপত্তায় আমাদের পুলিশের পেট্রোল টিম থেকে শুরু করে সবাই কাজ করছে। যার যখন ডিউটি সে তার দায়িত্ব পালন করছে। নতুন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ’।
ফখরুলের বক্তব্যকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার অংশ হিসেবে ওয়ারেন্ট তামিল করাও বাহিনীর অন্যতম কাজ। যাদের রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, সুতরাং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এদিকে নাশকতার শঙ্কায় বিশেষ ‘রোবাস্ট পেট্রোল’ ও ‘চেকপোস্ট’ মোতায়েন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব।
এ বিষয়ে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে, সে লক্ষ্যে সারা দেশে একযোগে কাজ করছে র্যাব। এ ছাড়া সামাজিক অপরাধ, হত্যা, চুরি ও ছিনতাই রোধে র্যাব-৪ এর বিশেষ রোবাস্ট পেট্রোল ও চেকপোস্ট মোতায়েন থাকবে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি, সহিংসতা কিংবা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলার ক্ষেত্রে র্যাবের স্পেশাল টিম, র্যাবের হেলিকপ্টার ডগ স্কোয়ার্ড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে সবসময়।’ একই সঙ্গে যেকোনো ধরনের গুজব, অপপ্রচার রোধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সর্বদা নজরদারি রাখছে বলেও জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এটি আসলে কয়েকদিন ধরেই চলছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এ বিষয়টিকে সামনে রেখে আমরা সড়ক-মহাসড়কে টহল বৃদ্ধি করেছি। আপনি দেখবেন, র্যাবের টহল বৃদ্ধির পর এসব অপরাধ অনেকটা কমে গেছে। তাছাড়া এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে সবারই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। তাই এই সময়ও যদি র্যাবের সরব উপস্থিতি সড়ক-মহাসড়কে থাকে তাহলে জনভোগান্তি কম হবে। তাছাড়া কেউ নাশকতা করতে চাইলে সেটিও মোকাবিলা করার প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা রয়েছে।’